ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন সময় লাগে সেটা নির্ভর করে আপনি কোন কাজটি শিখছেন, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন এবং কতোটুকু মনযোগ দিয়ে তা শেখার চেষ্টা করছেন তার উপর।
কোনো একটা কাজ শিখতে যতোটুকু না পরিশ্রম দরকার তার চেয়ে বেশি দরকার ইচ্ছাশক্তির এবং মনঃসংযোগের।
আপনি যত তারাতারি মনযোগের সাথে কাজ শেখা চালিয়ে যাবেন ততো তারাতারি আপনি সফলতা পাবেন। আর যত ধীরগতিতে এগোবেন ততো বেশি সময় লাগবে আপনার ঐ কাজটি শিখতে।
তাই আপনি যদি প্রফেশনালভাবে ফ্রিল্যান্সার হয়ে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে তার উপর অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে।
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার কিছু কিছু বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার। যেমনঃ ডাটা এন্ট্রি কী? আউটসোর্সিং কী? ওয়েব ডিজাইন কী ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই বিষয়গুলো সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা থাকলে আপনার জন্য ফ্রিল্যান্সিং শেখাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। যদিও ফ্রিল্যান্সিং এ জটিল কাজের পাশাপাশি কিছু সহজ কাজও আছে। তবে সেটা খুবই কম সংখ্যক এবং কম আয়ের।
অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সাররা আছে যারা মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে চায়। তাদের বক্তব্য হলো, “আমার এতো বেশি টাকার প্রয়োজন নেই, মাত্র ৪-৫ হাজার টাকা হলেই চলবে”।
তাদের ক্ষেত্রে আমি বলব যে আপনি ডাটা এন্ট্রীর কাজ শিখুন। এই কাজে আপনি ঠিক ঐ পরিমানের টাকা ই ইনকাম করতে পারবেন।
তবে শুধু এই কাজ করার জন্য যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিংকে বেছে থাকেন তাহলে আমি বলব আপনি ভুল করছেন। কারন এই ডাটা এন্ট্রির কাজ অনেক দীর্ঘ হয়ে থাকে, এর জন্য আপনাকে ৭-৮ ঘন্টা কাজ করতে হবে।
আর আপনি যদি ৭-৮ ঘন্টা কাজ করে মাত্র ৪-৫ হাজার টাকার স্বপ্ন দেখেন তাহলে আপনার জন্য আমার পরামর্শ হলো, আপনি এই কাজ না করে টিউশনি করান।
কমপক্ষে এটা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতে হবে, তাদের বাস্তবায়ন করার স্পৃহা থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং কাজ কিভাবে পাবেন?
আরো পড়ুনঃ অনলাইন এ বেশি বেশি ফ্রীলান্সিং কাজ পাওয়ার উপায়
চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং কেন করব?
আপনি একটা জিনিস চিন্তা করে দেখুন, আমাদের দেশে যুবসমাজে বেকারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তারা বেশির ভাগই শিক্ষিত। ধরে নিন আপনিও সেই দলে আছেন।
আপনি ইন্টারের পর অনার্সের জন্য ৪-৫ বছর সময় ব্যয় করলেন, তারপর মাস্টার্সের জন্য ১-২ বছর। তারপরেও চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ধরে নিলাম আপনি চাকরিটা পেয়েই গেলেন। আপনার বেতন শুরুর দিকে ধরা হবে ২০-২৫ হাজার টাকা।
মানে আপনি আপনার জীবনের ৭-৮ বছর ব্যয় করলেন মাসে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকার বেতনের চাকরীর জন্য। ভবিষ্যতে আপনার প্রমোশন হবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই, আর হলেও কমপক্ষে ৫-৬ বছর গাধার মতো খাটতে হবে।
কিন্তু আপনি কি কখনো এভাবে ভেবে দেখেছেন? “যদি আপনি এতোগুলো বছর চাকরীর পেছনে না দৌড়ে ২-৩ বছর দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা করে ফ্রিল্যান্সিং শিখে কাটাতেন তাহলে হয়তো আপনি ৩ বছরের মাথায় ই মোটামুটি একটা ইনকামের রাস্তা পেয়ে যেতেন।
প্রথম প্রথম হয়ত খুব কম পরিমানে ইনকাম হতো, যেমনঃ ৪-৫ হাজারের মতো, কিন্তু যখন আপনি দক্ষ হয়ে যেতেন তখন প্রত্যেক মাসে আপনার ইনকাম দ্বিগুন পরিমানে বৃদ্ধি পেতে শুরু করতো।”
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ভুল ধারণা
প্রফেশনালভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখে নিজেকে দক্ষ করতে হলে অবশ্যই ভালো মানের কম্পিউটার বা ভালো মানের একটি ল্যাপটপের কোনো বিকল্প নেই।
এতে করে আপনি খুব দ্রততার সাথে কাজ প্র্যাক্টিস করে শিখতে পারবেন কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। অনেকেই ভাবে মনিটরের দিকে তাকিয়ে কীবোর্ড চাপলেই ফ্রিল্যান্সিং হয়ে যায় আর মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়।
আসলে যারা এমনটা ভাবে তাদেরও পুরোপুরিভাবে দোষ দেয়া যায় না। কারন আমরা অনেকেই “মাত্র এক মাসের কোর্স করেই মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করার সুযোগ” এই ধরণের মুখরোচক বিজ্ঞাপণের প্রলোভনে পড়ে আজে বাজে আন-প্রফেশনাল কোচিং সেন্টারে যোগ দিয়ে নিজেদের মূল্যবান সময় ও টাকা উভয়ই নষ্ট করে ফেলি। শুধু এক মাস কেন এক বছরেও ফ্রিল্যান্সিং শেখা সম্ভব না।
চকচক করলেই যে সোনা হয় না এটাই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। ফ্রিল্যান্সিং এ হাজার হাজার কাজ আছে, একেক টি কাজ একেক রকম, একেক টি কাজ শিখতে একেক পরিমাণ সময় লাগে। তাই ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন সময় লাগে সেই সম্পর্কে কোনো রকম মন্তব্য করা বেশ দুষ্কর।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এ কোন ধরণের কাজ করবেন?
সঠিক ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার নির্বাচনে সচেতন হোন
তবে আপনি আর যা ই করেন না কেন ৪০০-৬০০-১২০০ টাকার অনলাইন কোর্স করতে যাবেন না। কারন এতে করে আপনার ফ্রিল্যান্সিং শিখার প্রতি যে ইচ্ছাশক্তি আছে সেটাও চলে যাবে।
এই ধরণের আজে বাজে কোর্স না করে যদি করতেই হয় তাহলে সরকারী ভাবে সরকারি ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করুন অথবা আপনি “ভৈরব আইটি জোন” নামক প্রতিষ্ঠান থেকেও নাম মাত্র ফিয়ের মাধ্যমে প্র্যাক্টিক্যালি ট্রেনিং নিতে পারেন।
এখানে প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সারদের দ্বারা ফ্রী, প্রিমিয়াম ও আপগ্রেড ভার্শনের টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
যদিও ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং শেখার অনেক উপায় বা মাধ্যম রয়েছে। যেমনঃ আউটসোর্সিং শেখার বই, ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল, সেমিনার ইত্যাদি।
যতই উপায় থাকুক না কেন, কেউ কেউ সাঁতার এক দিনে শেখে ফেলে আবার কেউ কেউ শেখে এক সপ্তাহে। দক্ষ সাঁতারু হতে গেলে অবশ্যই বহুদিন সাঁতার কাটা চালিয়ে যেতে হয়।
সবার মস্তিষ্ক ধারণ ক্ষমতা বা সহ্য শক্তি একরকম থাকে না। প্রাকৃতিকভাবেই মানুষ একজনের থেকে আরেকজন আলাদা। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও সেইম।
আপনি হয়তো ৬-৭ মাসের মধ্যেই ফ্রিল্যান্সিং এর খুঁটিনাটি সম্পর্কে জেনে যাবেন,আরেকজনের হয়তো ১-২ বছর লাগলো।
শিখতে যত সময়ই লাগুক না কেন আপনাকে সেই কাজে দক্ষ হতে গেলে তার দ্বিগুন সময় পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। তবে পরিশ্রম, ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যাবসায়ের জোড়ে আপনি যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন।