ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা অনলাইনে কাজ করার মাধ্যমে আয় করা এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাকরি ছেড়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিয়ে অনেকেই এখন ফ্রিল্যান্সার হতে চান। গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং ক্ষেত্রটি দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের ইল্যান্সের কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান (প্রথম আলো ডটকম) কে জানিয়েছেন, আমাদের দেশে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সম্ভাবনা অনেক। অনলাইনে আয় করার এবং কাজ পাবার ব্যাপারে নতুন ও আগ্রহীদের জন্য বিশেষ পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। পরামর্শগুলো নিম্নরুপঃ
(১) আগে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুনঃ আপনি কোন বিষয়ে পারদর্শী হবেন সে বিষয়টি আগে নির্বাচন করুন, প্রশিক্ষণ নিন, নিজের দক্ষতা অর্জন করুন।
(২) নিজের প্রচারনা চালানঃ নিজেই নিজের ঢোল পিটানোটার ব্যাপার টা অনেক খারাপ শোনালেও মার্কেটপ্লেসে এর কোনো জুড়ি নেই। নিজের প্রচারনা এবং সুনাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব আপনার দক্ষতার ব্যাপারে তথ্য দিয়ে আপনার পোর্টপোলিও তৈরি করুন। যাতে কোনো ক্লাইন্ট আপনার পোর্টপোলিও দেখে নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনিই তার কাজের জন্য যোগ্য।
(৩) মার্কেটপ্লেস গুলো সম্পর্কে ধারণা নিনঃ অনলাইন কাজের জন্য মার্কেটপ্লেসে প্রচুর সেক্টর আছে। যারা নতুন তাদের জন্য কাজ খোজা টা হয়ত প্রথমে সহজ হবেনা, কিন্তু প্রত্যকটা মার্কেট প্লেসেই তাদের নিজস্ব হেল্প সেন্টার থাকে, যেখানে অনেক উপকারি এবং সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। আপনাকে ঐসব তথ্যাদি সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে এবং তাদের পোস্টগুলো নিয়মিত পড়তে হবে।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য যা যা প্রয়োজন
সেরা আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং সাইটঃ
ছোট কাজের জন্য সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট হলো – Fiverr.com আপনি যদি কম রেটে কাজ করতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য বেষ্ট প্লাটফর্ম। এখানে আপনি ৫ ডলার থেকে শুরু করে ১০০০০ ডলারেরও কাজ পেতে পারেন। এই সাইটে কাজের পরিমাণ এতোই বেশি যে প্রত্যেক ৫ সেকেন্ডে একটি করে নতুন কাজের গিগ পাওয়া যায়।
এছাড়াও আরোও অনেক ছোট বড় মার্কেটপ্লেস তথা ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং সাইট আছে সেগুলো নিম্নরূপঃ
- Upwork.com
- Fiverr.com
- Freelancer.com
- Guru.com
- PeoplePerHour.com
- 99designs.com
- Speedlancer.com
- Toptale.com
- Simplyhired.com
- Flexjobs.com
ফ্রিল্যান্সিং এর ভালো দিক ও খারাপ দিকঃ
প্রত্যেকটা জিনিসেরই একটি ভালো দিক থাকলে তার একটি খারাপ দিকও থাকে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাহলে চলুন দেখা যাক ফ্রিল্যান্সিং এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো।
ভালো দিকঃ
- কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা
- অফিসের বেড়াজাল থেকে মুক্ত
- ঘরে বসে কাজ করার সুবিধা
- নিজের মূল্য নিজের ঠিক করার স্বাধীনতা
- বিশ্রাম বা অবসরের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই
- একই সময়ে একাধিক কোম্পানি তে কাজ করার সুবিধা
- নিজের পছন্দ মতো কাজ নির্বাচন করার স্বাধীনতা
- এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হয় না
- কাজের ক্ষেত্রে সৎ থাকা যায়
- দ্রুত টাকা ইনকাম করা যায়।
খারাপ দিকঃ
- টাকা উপার্জনের পরিমান প্রতি মাসে সমান হয় না
- নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সময় লাগে
- অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং রাত জাগার কারনে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে
- একাউন্ট ব্যান হবার সম্ভাবনা থাকে
- অনেক সময় সামাজিক মর্যাদা পাওয়া যায় না।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো?
যে দিক গুলো দেখে ফ্রিল্যান্সিং সাইট নির্বাচন করবেনঃ
যে সাইট গুলোতে আপনি কাজ করবেন সেই সাইটগুলোতে যেন বেশি প্রতিযোগিতা না থাকে সেটা যাচাই করে নিবেন,
আপনার কাজের মান অনুযায়ী পারিশ্রমিক ঠিক করুন তারপর বিড করুন,
যে সাইট গুলো তে ফেইক নিউজ বা ফেইক পোর্টপোলিও দেয়া থাকে সেই সাইটগুলোকে এড়িয়ে চলুন,
আপনি যে কাজে পারদর্শী সেই কাজের চাহিদা আছে কিনা সেটা যাচাই করে নিবেন,
আর পেইমেন্ট সিস্টেম এবং কমিউনিকেশন সিস্টেম কেমন সেটাও পরখ করে নিবেন।
অর্থাৎ উপরোক্ত বিষয়াদি মাথায় রেখে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো বাছাই করতে হবে।
আর ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে প্রচুর পরিমানে কেসস্টাডি করতে হবে। যেমন- কোথায় ভালো মানের কাজ পাওয়া যায়, কোথায় আপনার কাজ সম্পর্কিত জিনিস গুলো পাওয়া যাবে, সবসময় আপডেট থাকতে হবে, কোথাও কোনো ত্রুটির জন্য আটকে গেলে তার সমাধান বের করার জন্য ঘাটাঘাটি করতে হবে, কিভাবে ক্লাইন্টদের সাথে ডিল করতে হবে সেটা বুঝতে হবে, ইংরেজি নিয়ে চর্চা চালিয়ে যেতে হবে এবং আরো অনেক খুটিনাটি বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত স্টাডি করতে হবে।
একাধিক একাউন্ট তৈরি করে রাখবেনঃ
যে সব ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো অনেক পপুলার সে সব সাইটগুলিতেও একাউন্ট ক্রিয়েট করে রাখতে পারেন। একটা ওয়েবসাইটের মধ্যে একাউন্ট খুলে নিশ্চিন্তে বসে থাকবেন না, কারন যেকোনো সময় এই একাউন্ট ব্যান হয়ে যেতে পারে। তাই সর্বাধিক সাইটে একাধিক একাউন্ট খুলে আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।