ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
হোক সেটা দেশের ভিতরের কিংবা দেশের বাইরের। এটি সাধারন চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারবেন।
দেখা গেলো আপনার এখন কাজ করতে ইচ্ছা করছে না; আপনি করবেন না। যখন ইচ্ছা করবে তখন আবার চাইলেই করতে পারবেন।
এখানে কাজ করার ক্ষেত্রে জায়গাভেদে কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। আপনি চাইলেই এই কাজ অফিসে বসে করতে পারেন আবার ঘরে বসেও করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সার কে?
একজন ফ্রিল্যান্সার বা ফ্রিল্যান্স কর্মী এমন একজন স্ব-কর্মযুক্ত ব্যক্তি যিনি একাধিক ক্লায়েন্টকে তার সেবাসমূহ তথা সার্ভিস সরবরাহ করার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেন।
এই পরিষেবাগুলি ব্যক্তির দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত এবং যেমন তেমন ব্যবসায়গুলিতে এগুলো সরবরাহ করা হয় না।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং- এ দক্ষ হওয়ার জন্য কি কি করবেন?
অনলাইন এবং লোকাল ফ্রিল্যান্সিং কি?
অনলাইন জগতে ফ্রিল্যান্সিং বলতে আমরা বলতে পারি যে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি অন্যের কাজ করে দিবেন এবং সেই কাজের বিনিময়ে নির্দিষ্ট অর্থ পাবেন।
ইন্টারনেটের ব্যবহার, প্রচার ও প্রসারের কারণে এই বিষয়টা ভৌগলিক সীমারেখার বাইরে চলে গেছে।
তাই আপনাকে কাজ করার জন্য অফিসে যেতে হবে না কিংবা জায়গা খুঁজতে হবে না। আপনি অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই আপনার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
যেমন আপনি বাংলাদেশে থেকেই অন্য যেকোনো দেশের কাজ অনায়াসে করে দিতে পারবেন।
লোকাল ফ্রীল্যান্সিং বলতে মূলত দেশের অভ্যন্তরে যে কাজ করা হয় তাকেই বোঝায়, যদিও ফ্রিল্যান্সিং এর কোনো সীমা রেখা নেই।
দেশের বাইরে কাজ করার জন্য কোনো অনুমতি কিংবা আইনি ঝামেলা পোহাতে হয় না। আপনি দেশে থেকেই প্রচুর কোম্পানির জন্য কাজ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগে?
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো?
পার্টটাইম এবং ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সিং:
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজে আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন যে, আপনি কতটা সময় কাজ করতে পারবেন, কতটুকু কাজ করতে চান এবং এই কাজটি আপনি পার্ট টাইম (part-time) হিসেবে করবেন না ফুল টাইম (full-time) হিসেবে করবেন।
আপনি যদি একজন ছাত্র কিংবা ইতিমধ্যেই কোনো না কোনো সংস্থার চাকুরীজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনাকে পরামর্শ দিব এটাকে পার্ট টাইম হিসেবেই করতে।
আর যদি আপনার হাতে অফুরন্ত সময় থেকে থাকে তাহলে আপনার উচিত এটাকে ফুল টাইম হিসেবেই নেয়া।
ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কিছু কারনঃ
- কাজ খোঁজার সুবিধা।
- বেকারত্ব দূর করার সর্বোত্তম উপায়।
- সহজ আয়।
- যেকোনো সময় কাজ করা যায়।
- ব্যবহার সহজ এবং বিনামুল্যে কাজ শিখার ব্যবস্থা আছে।
- প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
- আপনি যেটাতে দক্ষ এবং কাজ করতে ইচ্ছুক সেটা করার সুবিধা।
তাছাড়া, ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নেয়া কাজ গুলি করার জন্য আপনার কোনো বিশেষ জায়গার প্রয়োজন হবেনা।
ফ্রিল্যান্সার না হওয়ার কিছু কারনঃ
- একাকিত্বের নেশায় আসক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা।
- রাত জেগে কাজ করায় অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
- নিজের বা আপন মানুষদের জন্য সময় বের করা কষ্টকর হয়ে উঠা।
- আয়ের অ-ধারাবাহিকতার কারনে।
আপনিও একজন ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন কি না?
অনেকেই মনে করেন যে ফ্রিল্যান্সিং এক ধরনের জব, কিন্তু আসলে তা না। ফ্রিল্যান্সিং হলো মুক্তভাবে কাজ করার একটি মাধ্যম। ইচ্ছে হলে কাজ করবেন, ইচ্ছে না করলে কাজ করা বন্ধ করে দিবেন। সম্পূর্ণটাই আপনার উপর নির্ভরশীল।
আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হতে চান তাহলে আপনাকে বিশেষ কোনো সেন্টারে গিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করে বিশাল অংকের টাকা গুনতে হবে না। আপনি চাইলেই ইউটিউব হতে সকল ধরনের কাজের উপর ভিডিও বা ব্লগ গুলো দেখে দেখে তাদের গাইডলাইন ফলো করে কাজ শিখতে পারেন।
কিন্তু তার জন্য চাই ধৈর্য, পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস। এই সব গুলো যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলেই আপনার দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব।
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কত রকমের হতে পারে?
ফ্রিল্যান্সিং এর কোনো প্রকারভেদ নেই। ফ্রিল্যান্সিং অনেক ধরনের হতে পারেন, যেমন- ফ্রিল্যান্স ইউটিউবার, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স ব্লগার, ফ্রিল্যান্স রাইটার, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা, ইত্যাদি।
ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি ঠিক কত ধরনের কাজ করতে পারবেন তার কোন শেষ নেই।
আপনি যে কাজ করতে চাইবেন বা আপনি যে কাজে দক্ষ সে কাজ দ্বারাই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এই ক্ষেত্রটিতে আপনিই সর্বেসর্বা এবং আপনার সিদ্ধান্তই শেষ।
কোন কাজগুলো আপনার জন্য উপকারী এবং কোন কাজ গুলো নাঃ
উপকারীঃ
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- ওয়েব ও গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ব্লগিং অ্যান্ড অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- কনটেন্ট রাইটিং
উপকারী নাঃ
বর্তমানে যে কাজ গুলোর চাহিদা কম সে কাজ গুলো না করাই উচিত। কারন যেখানে চাহিদা নেই, পরিসেবা সেখানে অনিশ্চিত।
এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যেটা করার ফলে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়, অবৈধ কোনো সাইটে বা অন্য কোনো সাইটে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করতে হয় এরকম কোনো কাজ করা যাবে না, শর্টকাটে বেশি অর্থ উপার্জনের লোভে পড়ে কোনো বেআইনি কাজ করা যাবে না।
তাই, বাজারে টিকে থাকার জন্য মেধার আশ্রয় নিন, আপনার জন্য এবং সমাজের জন্য উপকারী না এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এবং ক্রিয়েটিভিটি
আরো পড়ুনঃ অনলাইন এ বেশি বেশি ফ্রীলান্সিং কাজ পাওয়ার উপায়
একা ফ্রিল্যান্সিং করা এবং টিম নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার মধ্যে পার্থক্যঃ
- একা কাজ করার ফলে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজের উপর প্রচুর চাপের প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু দলগতভাবে বা টীমের দ্বারা কাজ করালে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চাপের পরিমানও কম হয় এবং কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পায়।
- একা কাজ করলে অনেক সময় বড় বড় কাজ সামলানো অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু টীমের সাহায্য নিলে তা নিমিশেই শেষ করে ফেলা যায়।
- একা কাজ করলে বড়জোর ২-৩ টা কাজ শেষ করা যায়, কিন্তু টিমের মধ্যে কাজ বন্টণ করে দিলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যায় এবং অসংখ্য কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- আপনি কখনোই সব বিষয়ে পারদর্শী হতে পারবেন না, আর হলেও তা একসাথে একই সময়ের মধ্যে কখনোই একাধিক কাজ সম্পন্ন করে দেখানো সম্ভব না। কিন্তু যদি টিম মেম্বারদের মধ্যে বন্টন করে যে যেটায় পারদর্শী তাকে দিয়ে সে কাজ করানো হয় তাহলে একই সময়ের ভিতর একাধিক কাজ সম্পাদন হয়ে যাবে।
তাই একা কাজ করার থেকে টীমের দ্বারা কাজ করিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি বেকারত্ব হ্রাস করার মাধ্যমে সামাজিক কল্যান এবং অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করা যায়।