বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত এবং জনপ্রিয় ইনকামের মাধ্যম হলো ফিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নেই এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে এখন।
কিন্তু যারা এখনোও জানেন না ফ্রিল্যান্সিং কি – ফ্রিল্যান্সিং কেন করবো – ফ্রিল্যান্সিং কীভাবে শুরু করবো, তাদের কাছে আমার ছোট্ট অনুরোধ তারা আগে উপরের আর্টিকেলগুলো পড়ে তারপর এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
আজ আমরা আলোচনা করবো মোবাইল দিয়ে কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায় সেই সম্পর্কে। প্রথমে আসি আমরা মোবাইল দিয়ে ফ্রীল্যান্সিং কেন করবো?
আমাদের আশে পাশে অনেকই আছেন যারা ফ্রীল্যান্সার হতে চান, কিন্তু তাদের ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পথে যেটা প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেটা হলো একটি ভালোমানের ল্যাপটপ বা কম্পিউটার।
তাই প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকা সত্ত্বেও যারা ভালোমানের ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর অভাবে ফ্রীল্যান্সিং করতে পারছেন না, তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।
এখন হয়তো অনেকেই ভ্রু কুঁচকে ভাবছেন যে “মোবাইল দিয়ে আবার ফ্রিল্যান্সিং করা যায় নাকি? আর করা গেলেও কতো টাকাই বা ইনকাম করা যাবে?”
যারা এরকমটা ভাবেন আজকের আলোচনাটা মূলত তাদের জন্যই।
পৃথিবীতে এখন আর এমন কিছুই নেই যা অসম্ভব বা মানুষ করতে পারে না। বর্তমানে হাই এবং এডভান্সড টেকনোলজির যুগে মোবাইল দিয়েও আয় করা সম্ভব।
এখন মোবাইল দিয়ে সেসব কাজ করা যায় যেটা একসময় কম্পিউটার দিয়েও করার কথা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হতো।
এখনকার ছোট ছোট বাচ্চারা মোবাইল দিয়ে পাবজি – ফ্রি ফায়ার এর মতো বড় বড় লোডের গেইম খেলে যেগুলো একটা সময় কম্পিউটারের মধ্যে খেলাও অসম্ভব ছিলো।
দিন বদলের সাথে সাথে সব কিছুই ধীরে ধীরে হাতের মুঠোই আসতে শুরু করায় মানুষ এখন সব কিছুতেই শর্টকাট খোঁজে। তাই আজ থেকে ৫-১০ বছর আগে যে কাজ মানুষ কম্পিউটারে করত সে কাজ এখন মানুষ মোবাইল দিয়েই করে ফেলে।
এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে উন্নতমানের প্রযুক্তি তথা টেকনোলজির বদৌলতে। তাহলে, আসুন জেনে নিই কিভাবে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় বা মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার উপায় গুলোর সম্পর্কে –
আরোও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এ কোন ধরণের কাজ করবেন?
আরোও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো?
ফ্রিল্যান্সিং এর নামে স্প্যামিং
২০২০ সালের মার্চের মাঝমাঝি সময়ে যখন সরকার হঠাৎ সারা দেশে লকডাউন জারি করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দেয়, তখন কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া সকল স্টুডেন্টরা তাদের পার্টটাইম জব এবং টিউশনি সবকিছু হারিয়ে ঘরে বসে যায়।
আর ঠিক তখনই সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে পড়ে যায় তারা এবং হন্নে হয়ে উপায় খুঁজতে থাকে কিভাবে ঘরে বসে আয় করা যায়।
যখন তারা সে বিষয়ে ইউটিউব বা গুগলে ঘাটাঘাটি করে ঠিক তখনই ফ্রিল্যান্সিং এর নামে স্প্যামিং এর শিকার হয় অনেক মানুষ ।
যেমন ধরুন – কিছু কিছু ইউটিউব ভিডিও কন্টেন্টের ক্যাপশনে লিখা থাকে যে, “এক ক্লিকেই ১০০ টাকা আয় করুন, মাত্র ৪-৫ ঘন্টা কাজ করেই দৈনিক ১০০-২০০ ডলার ইনকাম করুন, কোনোরকম পরিশ্রম ছাড়াই ঘরে বসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন আমাদের এই অ্যাপস এর মাধ্যমে” সহ নানা ধরণের প্রলোভন দেখে স্প্যামিং এর শিকার হয় হাজার হাজার মানুষ।
আর যদি কিছু অ্যাপস থেকেও থাকে যেখান থেকে ইনকামের সুযোগ আছে সেখানে তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশন্স গুলো এতটাই জটিল যে সেগুলো মানা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
“কেননা তারা প্রথমে একটা লিংক দিবে এবং বলবে যে, এই লিংকে প্রবেশ করে তাদের সাইটে বা অ্যাপসে গিয়ে একটা একাউন্ট খুলতে হবে, তারপর বলবে আপনার বন্ধুদেরকে রেফার করতে হবে তাও আবার তাদের ঠিক করে দেওয়া টাইমের মধ্যে যেটা প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
তারপরও ধরে নিলাম আপনি করে ফেললেন, কারণ এটা না করলে আপনি টাকা টা পাবেন না। তারপর যতক্ষণ না আপনার বন্ধুরা সেখানে একাউন্ট খুলবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি টাকা পাবেন না। আর যখন আপনি টাকা টা পেয়ে যাবেন তখন আপনার এই ভুয়া ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কিভাবে তুলতে হয় তা নিয়ে সৃষ্টি হয় আরেক বিভ্রান্তি।
জ্বি হ্যাঁ, কারণ এই সব টাকা এতো সহজে উইথড্র করা যায় না, তার জন্যেও আরো কিছু পন্থা অবলম্বন করতে হয়। কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হয় সেগুলো আর না ই বা বললাম, কারন আমি আপনাদের এই ধরণের কাজ না করার জন্যই উৎসাহিত করবো“।
এই ধরণের কাজ করা মানেই আপনার মূল্যবান সময়কে নষ্ট করা ও মানুষের সাথে প্রতারণা করা। তাই মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার নামে স্প্যামিং থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন সবসময়।
আরো পড়ুনঃ অনলাইন এ বেশি বেশি ফ্রীলান্সিং কাজ পাওয়ার উপায়
আরোও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগে?
মোবাইলের মাধ্যমে যেসব ফ্রিল্যান্সিং কাজ করা যায়
Freelancing.com – এ প্রায় ১২,০০০ এরও বেশি জবের ক্যাটাগরি রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৩০-৪০ টা জব ক্যাটাগরি আছে যেগুলো মোবাইলের দ্বারাও করা যায়। তাছাড়া আপনি ইউটিউব বা গুগলে মোবাইল দিয়ে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায় লিখে সার্চ দিলে সেই সম্পর্কে অসংখ্য ভিডিও ও আর্টিকেল পেয়ে যাবেন।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি কিছু জব সম্পর্কে রিসার্চ করে একটা লিস্ট বানিয়েছি যে জবগুলোর প্রচুর চাহিদা আছে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সত্যিকার অর্থে মোবাইলের সাহায্যে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
আশা করছি আপনি পুরো আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়বেন।
(১) ব্লগ রাইটিং
আমাদের দেশে অনেক তরুন প্রজন্ম আছে যারা লিখা লিখি করতে ভালোবাসেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম এ তাদের লিখা গুলো প্রকাশ করে থাকেন। তারা ইচ্ছা করলেই তাদের এই প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগ লিখে আয় করতে পারেন।
(২) আর্টিকেল রাইটিং
আপনি যদি রাইটিং এ পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার লোকাল যে ক্লায়েন্টরা আছেন তাদের হয়ে আর্টিকেল লিখতে পারেন। আমি যে এখন লিখালিখি করছি সেটাও কিন্তু লোকাল ক্লায়েন্টের আন্ডারেই লিখছি এবং মোবাইল দিয়ে লিখছি। তাই আমি যদি পারি তাহলে আপনি কেন নই?
(৩) ট্রান্সলেশন
ট্রান্সলেশন অর্থ হলো কোনো এক ভাষা হতে অন্য ভাষায় সেটাকে রুপান্তর করা। ধরুন, আপনি বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, ইংলিশ, স্প্যানিশ ও জার্মানি ভাষাও জানেন। তখন আপনি এই ট্রান্সলেশনের কাজটা নিতে পারেন এবং ক্লায়েন্টের চাহিদামত ভাষা ট্রান্সলেট করে দিতে পারেন। আর এই কাজটাও মোবাইল দিয়ে করা যায়।
(৪) রি – রাইটিং আর্টিকেল
আর্টিকেল রাইটিং আর আর্টিকেল রি-রাইটিং দুটি আলাদা বিষয়। আর্টিকেল রি-রাইটিং হলো আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে একটি আর্টিকেল দিবে, আপনি সেই আর্টিকেলটির একদম হুবুহু কপি না করে সেটাকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখবেন কিংবা আপনার ক্লায়েন্টের তথ্যের উপর ভিত্তি করে সেই আর্টিকেল থেকে ধারণা দিয়ে একটু অন্যরকম ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখবেন।
(৫) ট্রান্সক্রিপশন
এই কাজে ক্লায়েন্ট আপনাকে একটা সেমিনারের ভিডিও কিংবা অডিও দিবে যেটাকে আপনি কোনো রকম পরিবর্তন না করে ভিডিও বা অডিও তে বলা কথাগুলো টাইপ করে লিখে দিবেন। এটাও খানিকটা ট্রান্সলেশনের মতো বললেই চলে, এই কাজটাও মোবাইল দিয়ে করা যায়।
(৬) ফেসবুক মার্কেটিং
এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় আসক্তির নাম হলো ফেইসবুক। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২.৯৩৪ বিলিওন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। তাই সোশ্যাল মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুক অনেক বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। আপনি চাইলেই যেকোনো ব্র্যান্ডের প্রমোশন করে সেটাকে জনসম্মুখে নিয়ে আসতে পারেন। এই কাজটাও মোবাইল দিয়ে করা যায়।
(৭) ফোরাম পোস্টিং
ফোরাম পোস্টিং হলো আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে তার প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ড সম্পর্কিত তথ্য দিবে আর আপনি সেই প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ডকে বিভিন্ন বড় বড় প্ল্যাটফর্ম তথা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে হাইলাইট করবেন এবং সেই প্রোডাক্ট রিলেটেড ফোরামে পোস্টিং ও কমেন্টিং করার মাধ্যমে প্রমোশন করবেন।
(৮) ইউটিউব কন্টেন্ট
বাংলাদেশে যত ইউটিউবার আছে তাদের মধ্যে প্রায় সবাই প্রথম প্রথম মোবাইলের মাধ্যমে ইউটিউবিং করেছে। আপনি চাইলে নিজের একটা চ্যানেল খুলে সেখানে ডিজাইন সম্পর্কিত ভিডিও, রেসিপি সম্পর্কিত ভিডিও, ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত ট্রিক্স এন্ড টিপস সহ আরোও নানা ধরণের টপিক নিয়ে ইউটিউবিং করতে পারেন।
(৯) গ্রাফিক্স ডিজাইন
হ্যাঁ, মোবাইলের মাধ্যমেও গ্রাফিক্স ডিজাইন করা যায়। তবে সেগুলো ঠিক ওইরকম এডভান্সড লেভেলের হয় না, তাই মোবাইল দিয়ে ডিজাইন করে বাইরের ক্লায়েন্টের সাথে ডিল করতে যাবেন না। যদি করতেই হয় তাহলে লোকাল ক্লায়েন্টের সাথে করুন। যেমনঃ ব্যানার তৈরি, পোস্টার তৈরি ইত্যাদি।
(১০) কাস্টমার সাপোর্ট
কাস্টমার সাপোর্ট হলো কাউকে ফোনের মাধ্যমে সেবা দেওয়া। ধরুন, কোনো বড় ফোন কোম্পানি তাদের কাস্টমারদের সেবা দেওয়ার জন্য ফোন সার্ভিস দরকার। আপনি চাইলে সেই পোস্টে ঢুকে যেতে পারেন।
তারা প্রথমে আপনাকে একটি ভার্চুয়াল নাম্বার দিবে, এই নাম্বারে গ্রাহকরা কল করে তাদের সমস্যার কথা জানাবে আর আপনি তাদের সব কথা শুনে তাদের সমস্যাগুলোকে সমাধান করে দিবেন, সেই সাথে তাদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
এই কাজটা আপনি চাইলে ঘরে বসে নিজের মোবাইলের মাধ্যমেও করতে পারেন।
তো, এই ছিলো আজকের এই আর্টিকেলের সমাচার। আশা করি আপনাদেরকে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে পুরোপুরি ধারনা দিতে পেরেছি।
আপনারা যদি আমার এই লিখাটা পড়ে এতোটুকুও উপকার পেয়ে থাকেন তাহলেই আমার লেখা স্বার্থক।