প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন বলতে কোনো প্রজেক্টের বা এস্যাইনমেন্টের উপরি পৃষ্ঠার মধ্যে সেই প্রজেক্ট বা এস্যাইনমেন্ট সম্পর্কিত দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন দিয়ে সাজানোকে বুঝায়।
প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ কি?
যেকোনো প্রজেক্ট কিংবা এস্যাইনমেন্টের ভিতরের কর্মসূচীর একটি সংক্ষিপ্ত ‘সূচীপত্র বা বিবরণ’ সেই প্রজেক্টের প্রথম পৃষ্ঠায় সুন্দরভাবে উল্লেখ করাকেই মূলত সেই প্রজেক্টের ফ্রন্ট পেইজ বুঝায়। একটি প্রজেক্ট সম্পর্কে ধারণা পেতে সেই প্রজেক্টের ফ্রন্ট পেইজ এর তথ্য গুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং ভিতরের বিষয়বস্তু গুলোকে প্রতিফলিত করে।
প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন মূলত দুই ধরণের হয়ে থাকে। এক – অফলাইন ফ্রন্ট ডিজাইন, দুই – অনলাইন ফন্ট ডিজাইন। যেটা হাতের সাহায্যে খাতা কলমের দ্বারা তৈরি করা হয় সেটা হলো অফলাইন ভিত্তিক ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন। আর যেটা ভালো মানের কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের সাহায্যে কিছু আনরিয়াল এবং বিভিন্ন ইফেক্টের দ্বারা তৈরি করা হয় সেটাকে বলে অলনাইন ভিত্তিক ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন।
প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন (অফলাইন)
আগে যখন ইন্টারনেট ছিলো না তখনও কিন্তু এস্যাইনমেন্ট তথা প্রজেক্টের দারুণ চল ছিল। তখন হয়তো অনলাইনের মতো এতো নিখুঁতভাবে ডিজাইন করা যেতো না, এতো এতো রঙ ও ইফেক্টও ব্যবহার করা যেত না কিন্তু অনেক প্রতিভাবান শৈল্পিক মনের মানুষ ছিলো যারা তাদের হাতের সাহায্যে শিল্পীর মতো রঙ তুলি দিয়ে আলপনা আঁকত। কখনো ময়ূর, কখনো আকাশ ভরা কালোমেঘ, কখনো গ্রামের কিছু অপরূপ সৌন্দর্য তুলে ধরতো তাদের ক্যানভাসরুপি এস্যাইনমেন্টের প্রথম পৃষ্ঠায়।
প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন (অনলাইন)
এখন তো অনলাইনের যুগে প্রায় সবারই এস্যাইনমেন্ট বা প্রজেক্টের প্রয়োজন পড়ে। হোক সেটা স্কুল-কলেজের বা ভার্সিটির কোনো এস্যাইনমেন্ট কিংবা অফিস-আদালত বা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রজেক্ট।
এস্যাইনমেন্ট বা প্রজেক্ট তৈরি করার জন্য অনলাইনে অনেক ধরণের ওয়েবসাইট এবং সফটওয়্যার আছে, যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই কম সময়ের মধ্যে একটি প্রজেক্ট বা এস্যাইনমেন্ট তৈরি করে ফেলা যায়। অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই প্রজেক্ট তথা এস্যাইনমেন্টের উপস্থিতি ও গুরুত্ব রয়েছে।
এই প্রজেক্ট কিংবা এস্যাইনমেন্ট গুলোর উপরি পৃষ্ঠায় ডিজাইন করার পিছনেও কারণ আছে। আর সেটা হলো বস কিংবা শিক্ষককে ইম্প্রেস করা। অর্থাৎ, আপনার প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন যদি সত্যিই আকর্ষণীয় হয় তাহলে ইতোমধ্যেই আপনি আপনার বস কিংবা শিক্ষককে খুশি করার প্রথম ধাপ পার করে ফেলেছেন।
তারপর বাকি ধাপগুলো আপনি আপনার প্রজেক্ট কিংবা এস্যাইনমেন্টের ভিতরের কার্যাবলি দিয়ে পার করবেন। যদি প্রজেক্টের ভিতরের সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে প্রকাশ করতে পারেন তাহলে আপনার ভাবমূর্তি অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকবে।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য যা যা প্রয়োজন
প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইনের গুরুত্বঃ
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে, “প্রজেক্ট কিংবা এস্যাইনমেন্টের উপরে ডিজাইন করে সময় নষ্ট করার কি দরকার? প্রজেক্টের ভিতরের সবকিছু ঠিকঠাক হলেই তো চলবে”। এরকমটা ভাবা কিন্তু অন্যায় না, আবার ঠিকও না।
(একটি শিক্ষণীয় ঘটনা)
ধরুন, “আপনি এভাবেই একটা প্রজেক্ট বানিয়ে আপনার বসের কিংবা শিক্ষকের নিকট জমা দিলেন। এবং আপনার একজন সহকর্মীও আপনার সাথে তার প্রজেক্টটিও জমা দিলো।
কিন্তু আপনার সহকর্মীর প্রজেক্টের ফ্রন্ট পেইজ টি খুব সুন্দর করে ডিজাইন করা, সেটা দেখার সাথে সাথেই কিন্তু আপনার খারাপ লাগতে শুরু করবে।
কারণ আপনার প্রজেক্টের তুলনায় তার টা দেখতে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে। ব্যাস… এখানেই কিন্তু আপনার কনফিডেন্স লেভেল টা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছুটা ডাউন হয়ে যাবে।
শুধু আপনার বস কিংবা শিক্ষক ই নন, যে কাউকেই এই দুটো প্রজেক্ট থেকে যেকোনো একটা তুলতে বললে, সে আপনার সহকর্মীর প্রজেক্টা ই তুলবে, কারণ সেটা আপনার প্রজেক্টের তুলনায় বেশি আকর্ষণীয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে আপনি আপনার সহকর্মীর থেকে এক ধাপ পিছিয়ে।
তারপর আসা যাক প্রজেক্টের ভিতরের অংশে, আপনার প্রজেক্ট এর ভিতরের অংশ হয়তো আপনার সহকর্মীর থেকে ভালো কিংবা সমান সমানই হয়েছে। তখন আপনার বস চিন্তা ভাবনা করে প্রজেক্ট টি সিলেক্ট করবেন। তিনি ভেবে দেখবেন যে, ‘আপনি এবং আপনার সহকর্মী কি কি করেছেন এই প্রজেক্ট টি পাওয়ার জন্য এবং আপনাদের কি কি ক্রিয়েটিভিটি আছে এই প্রজেক্ট সম্পর্কে’।
যখন আপনার বস কিংবা শিক্ষক লক্ষ্য করবেন যে, আপনি শুধু প্রজেক্টটি ই জমা দিয়েছেন তার মানে আপনি কাজটির প্রতি তেমন আগ্রহী নন, শুধু যতটুকু দায়িত্ব পালন করার কথা ছিলো আপনি শুধু সেটুকুই করে দায় মুক্ত হয়ে প্রজেক্ট টি অর্জন করতে চেয়েছেন।
অপরদিকে, আপনার সহকর্মী উক্ত প্রজেক্ট সম্পর্কিত প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন করে তার ক্রিয়েটিভিটি প্রমাণের চেষ্ঠা চালিয়েছে এবং তার প্রজেক্টের ভিতরের অংশও প্রায় আপনার মতোই প্রাণবন্ত। যেটা প্রমাণ করে যে, সে আপনার চেয়ে আরোও বেশি উপযুক্ত সেই প্রজেক্টটি পাওয়ার জন্য।
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজের গুরুত্ব কমে যাওয়াটাই যথেষ্ট আপনার প্রজেক্ট টি হাতছাড়া হওয়ার জন্য কিংবা শিক্ষকের থেকে কম নাম্বার পাওয়ার জন্য”।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে Facebook এ একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করবেন
উক্ত ঘটনা থেকে আমরা কি কি শিখলাম সেটা এক নজরে দেখে নেওয়া যাকঃ
- কখনো কোনো কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না, হোক সেটা প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন কিংবা অন্য যেকোনো কাজ।
- এমন কোনো স্কোপ রাখা যাবেনা যাতে আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটে।
- নিজের প্রতিদ্বন্দিকে কখনো এক চুল পরিমানও ছাড় দেওয়া যাবে না, এবার সে যে ই হোক না কেন।
- সব সময় নিজের ক্রিয়েটিভিটি উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং সঠিক জায়গায় তার ব্যবহার করা জানতে হবে।
- সবসময় হার্ডওয়ার্কিং থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং বসকে খুশি করার চেষ্টা করতে হবে।
যেকোনো প্রজেক্টের প্রথম পৃষ্ঠায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয় বিধায় এটাকে প্রজেক্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হয়। যারা প্রথম পৃষ্ঠার গুরুত্ব বুঝে তারাই ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইনের ক্ষেত্রে বেশি সময় ব্যয় করে।
আবার অনেকেই আছেন যারা প্রজেক্ট দেয়ার পূর্বে ফ্রন্ট পেইজে ডিজাইন রাখাকে বাধ্যতামূলক করে দেন। ফলে সবাই ই বাধ্য হয়ে ফ্রন্ট পেইজে ডিজাইন সহ প্রজেক্ট জমা দেন।
ফ্রিল্যান্সিং এ প্রজেক্ট ফ্রন্ট ডিজাইন করে আয় করুনঃ
অনলাইনে প্রচুর কাজ আছে যা আমাদের অজানা। কিন্তু আমরা চাইলেই সেই কাজ গুলো করে নিজের প্রতিভার জানান দিতে পারি। যেমন ধরুন, ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইনের কাজ। গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা থাকলে ভালো ভালো ডিজাইন তৈরি করে আপনিও তার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
অনলাইনে এই ধরণের কাজ পাওয়া খুব সোজা। যারা প্রজেক্ট কিংবা এস্যাইনমেন্ট এর কাজ কমপ্লিট করতে করতেই সময় শেষ করে ফেলেন কিংবা ডিজাইন করতে পারেন না কিন্তু বসকে ইম্প্রেস করতে চান, তারাই মূলত অনলাইনের মাধ্যমে অন্যের দ্বারা এই ডিজাইনটি করিয়ে নেয়।
এভাবে আপনিও চাইলে তাদের হয়ে পারমানেন্ট কিংবা টেম্পোরারি প্রজেক্ট ডিজাইনার ক্লায়েন্ট হতে পারেন। এটা করেও আপনি মাসে প্রচুর ইনকাম করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং- এ দক্ষ হওয়ার জন্য কি কি করবেন?
প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইনের সময় যে টিপস গুলো মেনে চলবেনঃ
- প্রথম পৃষ্ঠার ডিজাইন গুলো সবসময় সাধারণ এবং শালীন রাখার চেষ্টা করবেন, কোনো ভাবেই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অপ্রয়োজনীয় কোনো রঙ বা ইফেক্ট ব্যবহার করবেন না।
- প্রজেক্ট যে সম্পর্কে বানিয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলো প্রথম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করবেন যাতে তা আপনার প্রজেক্ট সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা বহন করে।
- প্রথম পৃষ্ঠায় বিরবনগুলো সংক্ষিপ্ত ও পয়েন্ট আকারে রাখার চেষ্টা করবেন, অন্যথায় তা আপনার প্রজেক্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলতে পারে।
- ব্যাকরণগত কোনো সমস্যা যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন, ডিজাইন টা যেন প্রজেক্ট সম্পর্কিত হয় সেদিকেও বিশেষ নজর দিবেন এবং ভুল তথ্য দেওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
- ডিজাইনের সময় অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানের লগো, থিম কালার এসব খুব সাবধানতার সাথে ব্যবহার করবেন এবং চোখ ধাঁধানো কালার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।
প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন টেমপ্লেটঃ
এখন ধরুন, আপনি প্রজেক্টের কাজ শেষ করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে গেছেন বা আপনার হাতে প্রজেক্টের ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন করার মতো সময় নেই। এদিকে আপনি জানেন যে, একটা প্রজেক্ট এর জন্য তার ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ… তখন আপনি কি করবেন?
তখন আপনি ‘ক্যানভা’র আশ্রয় নিতে পারেন। এই ক্যানভার সাহায্যে আপনি অনেক গুলো প্রিমেইড টেমপ্লেট থেকে আপনার পছন্দ মতো যেকোনো টেমপ্লেট ব্যবহার করে প্রজেক্টের ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন করে ফেলতে পারবেন। আপনাদের যদি ক্যানভা সম্পর্কে ধারণা না থেকে থাকে তাহলে নিচের আর্টিকেল গুলো পড়ে আসতে পারেন, সেখানে ক্যানভা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
তাছাড়া আপনি MS Word ও ব্যবহার করতে পারেন। এখানেও অনেক রকমের ফিচার ও প্রিমেইড টেমপ্লেট রয়েছে যা আপনি নিচের ইচ্ছামত কাস্টমাইজশন করে তাতে পরিবর্তন আনতে পারেন।
তো এই ছিলো আজকের প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করছি আপনারা আমার লিখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।