ফ্রিল্যান্সিং – বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রশংসিত একটা পেশা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এখানে বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সাররাই বেকার জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা যুবক।
প্রত্যেক বছর যখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী পাশ করে বের হয় তখন কিন্তু সবাই ই চাকুরি পায় না। হ্যাঁ, কেউ কেউ হয়তো পায় কিন্তু সেটা হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র।
আর বাকিরা যাদের টাকা আছে বা ঋণ নেয়ার এবং পরিশোধ করার সামর্থ্য আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যবসা করে, কেউ বিদেশে চলে যায়, কেউ চাষবাস করে বা খামার দিয়ে নিজের ভবিষ্যত দাঁড় করানোর চেষ্ঠা করে।
কিন্তু, আমাদের বাংলাদেশের বেশির ভাগ যুবকই চাকুরি করতে পছন্দ করে, ফলে আশানুরূপ চাকুরি করতে না পারায় তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের হতাশা কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এ কোন ধরণের কাজ করবেন?
চাকুরীর বাজারে মন্দা দেখা দেয়ার ফলে যখন চারিদিকে শুধু অন্ধকার জগতের কালো হাতছানি, তখনই কিছু উদ্যমী যুবকদল সেই ডাক কে উপেক্ষা করে আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইনে তাদের ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এখন আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ যুবকরা বিদেশ থেকে প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন বিদেশি রেমিটেন্স নিয়ে আসছে। যা আমাদের দেশকে বিশ্বের দরবারে আলাদাভাবে রিপ্রেজেন্ট করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
আপনিও কি ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে আয় করতে চান? তাহলে আজই কিছু ছোট ছোট কিংবা সহজ কয়েকটি কাজ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করে দিন।
আসুন তাহলে এখন জেনে নিই – ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজ নতুনদের জন্য সহজ…
ফ্রিল্যান্সিং এ তো অনেক ধরণের কাজের ক্যাটাগরি রয়েছে, যেমনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, এস ই ও, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এন্ড কাস্টমাইজেশন সহ আরোও অনেক মেইন ক্যাটাগরি আছে যেগুলো আপনার কাজের জন্য সিলেক্ট করতে পারেন।
প্রথমেই মেইন ক্যাটাগরি দিয়ে কাজ শুরু করতে যাবেন না, কারণ ঐ কাজ গুলো এক্সপার্ট লেভেলের কাজ, যখন আপনি সব গুলো ক্যাটাগরিতে এক্সপার্ট হয়ে যাবেন তখন ঐ বড় বড় কাজ গুলো করবেন।
তাহলে এখন নিশ্চয় ভাবছেন যে “তাহলে কিভাবে শুরু করবো?” জ্বী, তার উত্তর হলো “আপনি প্রথমে সাব ক্যাটাগরি দিয়ে শুরু করবেন”।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগে?
সাব ক্যাটাগরি গুলো হলো একেকটা মেইন ক্যাটাগরির কিছু ছোট ছোট অংশ। যেমন গ্রাফিক্স ডিজাই্ন হলো একটি মেইন ক্যাটাগরি, তার সাব ক্যাটাগরিগুলো হলো লগো ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, এডস ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন ইত্যাদি।
এখন তো স্মার্ট মোবাইলের যুগে সবাই ই কমবেশি এডিটিং সম্পর্কে বুঝে এবং জানে। আপনি চাইলে খুব সহজেই মোবাইল এর মাধ্যমে আপনার ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন । আপনি চাইলেই ফটো এডিটিং দিয়ে শুরু করতে পারেন, যেমনঃ ব্যাকগ্রাউন্ড রিমোভ, অবজেক্ট রিমোভ সহ আরো অনেক ধরণের এডিটিং লেভেল আছে যেগুলো মাধ্যমে আপনার বায়ারকে আকৃষ্ট করতে পারেন, তার জন্য আলাদা ভাবে কোনো পোর্টফোলিও’র দরকার পড়বে না।
এবার আসুন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর সাব ক্যাটাগরি নিয়ে আলোচনা করি। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট যেহেতু একটা বড় ক্যাটাগরি, তাই বায়ার রা আপনার আগের কোনো কাজের অভিজ্ঞতা আছে কিনা জিজ্ঞেস করবে বা আপনার পোর্টফোলিও দেখতে চাইবে। যদি আপনার পোর্টফোলিও বা কাজ দেখে বায়ার রা সন্তুষ্ট না হয় তাহলে আপনি কাজ টি পাবেন না।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো ?
তাই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের সাব ক্যাটাগরি দিয়ে কাজ শুরু করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেমনঃ ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট বা ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন বা প্রোডাক্ট আপলোড অথবা ওয়েবসাইট মেইন্টেনেন্স এর কাজ দিয়ে শুরু করতে পারেন।
এগুলো কিভাবে করতে হয় তা ইউটিউবে লিখে সার্চ করলেই অসংখ্য ফ্রি ক্লাস পেয়ে যাবেন এবং সেখান থেকে খুব সহজেই শিখে ফেলতে পারবেন।
এবার আসি ডাটা এন্ট্রি ক্যাটাগরির আলোচনায়, যদিও অনেকে ডাটা এন্ট্রির কাজকে সাব ক্যাটাগরির আন্ডারে ভেবে থাকেন, কারণ এই কাজটাও অনেক টা সহজ টাইপের কাজ। কিন্তু ডাটা এন্ট্রি কাজের পরিধি কিন্তু অনেক বড়।
যাই হোক, আপনি যে কাজের পরিসংখ্যানে এক্সপার্ট, সেই কাজের স্যাম্পল বা নমুনা আপনার বায়ারকে দিতে পারেন এবং সেই সাথে উক্ত কাজে সংযুক্ত হয়ে যেতে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে কাজের মার্কেট রিসার্চ করে কাজের পরিধি বাড়াতে পারেন।
তারপর আসি এসইও তে, অর্থাৎ “সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে”। আপনি চাইলে আপনার ওয়েবসাইট কে অথবা আপনার বায়ারের ওয়েবসাইটকে বা তার কোনো পোস্টকে গুগল – ইউটিউবে র্যাংক করাতে পারেন।
অফলাইন এসইও – অনলাইন এসইও’র মধ্য থেকে যেকোনো একটা বা দুটো দিয়েই আপনি কাজ শুরু করতে পারেন। কাজ শুরুকালীন সময়ে যদি কোনো রকম সমস্যার মুখোমুখি হোন তাহলে ইউটিউবের আশ্রয় নিতে পারেন।
সর্বশেষে আসি সবচেয়ে সহজ “মার্কেটিং, রাইটিং এবং ব্লগিং” এর আলোচনায়, আপনি প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং দিয়ে শুরু করতে পারেন অথবা ব্লগ রাইটিং বা পোস্টিং এর মাধ্যমে কাজ শুরু করতে পারেন। এগুলো অন্যান্য কাজের তুলনায় অনেকটাই সহজ।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং করে যে কাজে বেশি টাকা আয় করতে পারবেন
কনটেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন টপিকের উপর আলোচনা করতে পারেন, অথবা যে বায়ারের হয়ে লিখবেন তার থেকে টপিক নিয়ে সেটাকে গুগলে রিসার্চ করে সেই টপিকের উপরে কয়েকটা আর্টিকেল লিখে ফেলতে পারেন।
ব্লগিং হলো সবচেয়ে সহজ কাজের একটি। যারা ফ্রিল্যান্সার হতে ইচ্ছুক কিংবা নতুন ফ্রিল্যান্সার আছেন তারা নিশ্চয় স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন? তাহলে আর কি লাগে! আপনি আপনার মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে যা ইচ্ছা ভিডিও করে তা ইউটিউবে আপলোড করে দিন, ব্যাস।
আপনার ভিডিওর উপর যদি পাবলিকের আকর্ষণ তৈরি হয় তাহলে আর ভাবতে হবে না, বাকি মার্কেটিং এর কাজ পাবলিকরাই করে দিবে “লাইক কমেন্ট, শেয়ার ও রি-আপলোডের মাধ্যমে”।
এভাবে যদি আপনি প্রথম থেকে শুরু করে সবগুলো মেইন ক্যাটাগরির সাব ক্যাটাগরি গুলো কে নিজের আয়ত্তে এনে ফেলতে পারেন, তাহলে ফাইভার – আপওয়ার্কে আপনার কাজের অভাব থাকবে না।
ফাইভারে সর্বনিম্ন পাঁচ ডলার থেকে শুরু করে হাজার ডলারের কাজ ও রয়েছে। আপওয়ার্কও সেইম ফাইভারের মতোই এখানেও অনেক কাজ পাওয়া যায়, এমন কি আপওয়ার্কের থেকেও কম চার্জ কাঁটা হয় ফাইভারে। যখন আপনি এক্সপার্ট লেভেলে পৌঁছে যাবেন তখন দেখবেন যে প্রতিনিয়তই আপনার কোনো না কোনো কাজের জন্য অর্ডার আসতে শুরু করেছে। তারপর যখন আপনি আস্তে আস্তে বড় প্রজেক্ট নিতে চেষ্ঠা করবেন আর তা পেতে শুরু করবেন, তখন আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আপনি তখন হয়ে উঠবেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।