ক্যানভা ডিজাইন কি? (পার্ট ১) এর মধ্যে আমরা আলোচনা করেছিলাম কিভাবে ক্যানভা একাউন্ট খুলতে হয় এবং একাউন্ট খোলার পর ক্যানভার বিভিন্ন টুলসের এর ব্যবহার কিভাবে করতে হয় সেই সম্পর্কে।
যদিও সেখানে ক্যানভা দিয়ে আরোও কি কি করা যায় সে সম্পর্কে বলার কথা ছিলো কিন্তু আর্টিকেল বড় হয়ে যাওয়া্র কারনে এটাকে দুটো পার্টে ভাগ করতে হয়েছে।
আশা করছি আপনারা প্রথম পার্ট পড়েই দ্বিতীয় পার্টে এসেছেন, যদি না পরে থাকেন তাহলে অনুরোধ করবো প্রথম পার্ট টি পড়ে আশার জন্য। ক্যানভা ডিজাইন কি?
ক্যানভা কি?
ক্যানভা ডিজাইন কি? যদিও ধরে নিচ্ছি আপনারা এর সম্পর্কে পূর্বের আর্টিকেলটি পড়ে ইতোমধ্যে মোটামুটি ধারণা নিয়ে ফেলেছেন। তাও আবার বলছি, “ক্যানভা হলো অনলাইনের মাধ্যমে ইনফোগ্রাফিক্স, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং যাবতীয় পোস্টিং ডিজাইন করার একটি উন্মুক্ত বিদেশি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি একাউন্ট খোলার মাধ্যমে নিজের ইচ্ছেমতো টুলস ও ক্যাটাগরি ব্যবহারের দ্বারা সেগুলোকে ডিজাইন করে বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারার একটি সফটওয়্যার বা অ্যাপ।
আরো পড়ুনঃ ২০+ সেরা গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইট
ক্যানভা দিয়ে কি গ্রাফিক্স ডিজাইন করা যায়?
তার উত্তর হলো – হ্যাঁ, করা যায়। অনেক ফ্রিল্যান্সার এবং ডিজাইনাররা আছেন যারা ক্যানভা দিয়ে ডিজাইন করে থাকেন। এমনকি তারা এই ক্যানভার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ইমেজ ও টেমপ্লেট তৈরি করে সেটাকে ফেসবুক এবং ইউটিউবেও ব্যবহার করে থাকেন।
আপনি চাইলে যেকোনো ধরণের পোস্ট ডিজাইন করতে পারবেন, যেমনঃ ফেসবুক পোস্ট, ইন্সটাগ্রাম পোস্ট, টুইটার পোস্ট, লিঙ্কডইন পোস্ট, ভিডিও পোস্ট সহ আরোও অসংখ্য রকমের ডিজাইন।
ক্যানভার ফ্রী ফিচারসে কি কি আছে?
ক্যানভার ফ্রী ভার্সনে সব ধরণের ক্যাটাগরিই আছে, যেমন – টেমপ্লেট, এলিমেন্টস, আপলোডস, ফটোস, ভিডিওস, ব্যাকগ্রাউন্ড সহ আরো অনেক গুলো মেজর ফিচারস আছে যেগুলো আমরা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারি।
ক্যানভার প্রো ফিচারসে কি কি আছে? এমনিতে ফ্রী ক্যানভাতে যা যা আছে প্রো ক্যানভাতে তা ই আছে, শুধু কিছু কিছু নতুন ফিচারস যুক্ত হয়েছে, যেগুলো ফ্রী ভার্সনে ছিলো না। তাদের মধ্যে একটা হলো “ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভার” অপশন।
“ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভার” অপশনটি আপনি আপলোডস ক্যাটাগরিতে ক্লিক করলেই পেয়ে যাবেন। এখানে আপনি যেকোনো ছবি আপলোড করে সে ছবিকে সাদা ক্যানভাসে নিয়ে তার ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে ফেলতে পারবেন এবং অনেক ধরণের ফিল্টার ব্যবহার করতে পারবেন।
তাছাড়া ক্যানভার বাম দিকে সাইড প্যানেলে মোর ক্যাটাগরি তেও আরোও কিছু অপশন চালু হয়ে যাবে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি প্রো লেভেলের ডিজাইনার হয়ে উঠতে পারবেন।
এই ক্যানভা প্রো ভার্সন টি মূলত টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয় বিধায় অনেকেই প্রো ভার্সনটি ব্যবহার করে না। যতটুকু সম্ভব ফ্রী ভার্সন দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়ার চেষ্ঠা করে। কিন্তু আপনি কিভাবে একদম বিনামূল্যে ক্যানভার প্রো ভার্সন পেয়ে যেতে পারেন শুধুমাত্র কিছু ট্রিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে, সেই ট্রিক্স সম্পর্কে আরেকদিন ফ্রীতে ক্যানভার প্রো ভার্সন কিভাবে পাবো এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
আরো পড়ুনঃ বাংলা টাইফোগ্রাফি কিভাবে করা যায় এবং সাধারণ ধারনা
ক্যানভা দিয়ে কি কি কাজ করা যায়?
তার উত্তর হলো ক্যানভা দিয়ে এমন অসংখ্য কাজ করা যায়, যার দ্বারা আপনি ফাইভার – আপওয়ার্কের মতো ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
আসুন তবে জেনে নিই কোন কোন কাজগুলো ক্যানভা দিয়ে করা যায় –
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যানার
ক্যানভার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরণের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যানার তৈরি করতে পারবেন, ফেসবুক কভার ফটো, ইন্সটাগ্রাম সাইজ ফটো, পিন্টারেস্ট সাইজ ফটো, লিংকড ইন সাইজ ফটো সহ বিভিন্ন ধরণের পোস্টারও আপনি তৈরি করতে পারবেন। এই ডিজাইনগুলো আপনি প্রিমেইড টেমপ্লেট ব্যবহারের দ্বারা খুব কম সময়ের মধ্যে আপনি নিজের জন্য একটা ব্যানার বা পোস্ট কাস্টমাইজ করে ফেলতে পারেন।
ভিজিটিং কার্ড ডিজাইন
ক্যানভা দিয়ে চাইলে আপনি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনেও ভিজিটিং কার্ড ডিজাইন করে বানিয়ে ফেলতে পারবেন। আপনাকে শুধু সাইজ টা সিলেক্ট করে “টেমপ্লেট ক্যাটাগরি” তে গিয়ে ভিজিটিং কার্ড লিখে সার্চ করলেই অসংখ্য প্রিমেইড টেমপ্লেট চলে আসবে। আপনি আপনার ইচ্ছামতো ডিজাইন বাছাই করে এবং সেটাকে কাস্টমাইজ করে আপনার নিজের বা ব্যবসায়িক একটা ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে ফেলতে পারবেন।
লগো ডিজাইন
ক্যানভা দিয়ে লগো ডিজাইনও করা যায়। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার বা ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে ক্যানভা দিয়ে অতি সহজে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই একটি মান সম্মত লগো তৈরি করে ফেলতে পারবেন। লগো ডিজাইন করেও অনেক ফ্রিল্যান্সাররা অনেক টাকা ইনকাম করছেন।
আরো পড়ুনঃ প্রজেক্ট ফ্রন্ট পেইজ ডিজাইন
মার্কেটিং পোস্টার তৈরি
ধরুন, আপনি ফেসবুকে বা ইন্সটাগ্রামে অথবা যেকোনো অফলাইন প্রক্রিয়ায় আপনার বা আপনার ক্লায়েন্টের কোনো পণ্যের প্রচারণার জন্য পোস্টার তৈরি করতে চাচ্ছেন, তখন আপনি একদম নিশ্চিন্তে ক্যানভার মাধ্যমে উক্ত পোস্টারগুলো ডিজাইন করে ফেলতে পারেন।
ইনফোগ্রাফিক্স পোস্ট তৈরি
ক্যানভা সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ইনফোগ্রাফিক্সের জন্য। ইনফোগ্রাফিক্স হলো এমন একটি ডিজাইন যেখানে একটি পোস্ট বা ডিজাইনের মধ্যে গ্রাফিক্সের পাশাপাশি ইনফরমেশনও থাকবে। অর্থাৎ, একটা গ্রাফিক্স এর পাশে টেক্সটের মধ্যে উক্ত গ্রাফিক্সটি যে বিষয়ের উপর বানানো হয়েছে সে বিষয় সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকবে। এটার মাধ্যমেও অনেক ক্রিয়েটিভ ডিজাইন বানানো সম্ভব।
অ্যানিমেটেড মিম পোস্ট তৈরি
অ্যানিমেশনের ফটো দিয়ে কিংবা কোনো গ্রাফিক্সের স্টিকার বসিয়ে তার পাশে কিছু হাস্যকর ক্যাপশন দেয়ার মাধ্যমে মিম পোস্ট বানানো যাবে। যেমন – কোনো কুকুরের বা বিড়ালের গ্রাফিক্স ফটো বা রিয়েল ফটো অথবা অ্যানিমেটেড বা থ্রিডি ফটো বসিয়েও মিম পোস্ট বানাতে পারেন।
ফটোর স্লাইড শো ভিডিও তৈরি
আবার আপনি যদি কোনো প্রেজেন্টশন করার জন্য অথবা কোনো সেমিনার করানোর জন্য অনেকগুলো ছবির সমন্বয়ে একটা ভিডিও বানাতে চান যেটাতে ২ মিনিট অন্তৎ-অন্তর একটা একটা করে ছবি পরিবর্তন হবে। তাহলে আপনি ক্যানভা দিয়ে সুন্দর একটি স্লাইড সো ভিডিও তৈরি করে ফেলতে পারবেন। এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট, টিচার, অফিসের কর্মচারী, ফ্রিল্যান্সার বা ডিজাইনার সহ সবাই তাদের প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারবেন।
ভিডিও ডিজাইন
কোনো বিষয়ের উপর ভিডিও ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্ট তৈরি করতে চাইলে আপনি ক্যানভা দিয়েও সেটা করতে পারেন। তার জন্য স্ক্রীনের বাম দিকে সাইড প্যানেলে গিয়ে ভিডিও ক্যাটাগরি তে যাবেন সেখানে গিয়ে সার্চ বারে যে বিষয়ের উপর আপনার ভিডিও প্রয়োজন সে বিষয় লিখে সার্চ করলেই সেই সম্পর্কিত অসংখ্য শর্ট ভিডিও চলে আসবে এবং আপনি সেগুলোর থেকে পছন্দমতো ভিডিও সিলেক্ট করে সাদা ক্যানভাসে এনে সেটাকে নিজের মতো করে ইডিট করতে পারেন।
এই ধরণের ছোট খাটো ভিডিও সাধারনত কোনো এড বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার/পোস্টের জন্য তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে বড় ধরণের কোনো ভিডিও কিন্তু আপনি ক্যানভার দ্বারা ইডিট করতে পারবেন না।
ক্যানভা ডিজাইন শিখে কিভাবে অনলাইন এ আয় করার যায় ?
বর্তমানে ক্যানভা দিয়ে অনেক ধরণের ডিজাইন করা যায় বিধায় অনেক ফ্রিল্যান্সার এবং ডিজাইনাররা তাদের ছোট খাটো কাজ থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের কাজই এর দ্বারা করে থাকেন। আর এসব কাজ মূলত ফাইভার বা আপওয়ার্কের মতো ফ্রিল্যান্সিং জব সেক্টর গুলোতে পাওয়া যায়।
আপনি চাইলে যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া এন্ড মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত হতে পারেন। আপনি আপনার ক্লায়েন্টের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার কাজের দায়িত্ব নিতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে মার্কেটিং করতে পারেন, আপনার ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠানের হয়ে তাদের ওয়েবসাইটে ব্লগ বা আর্টিকেল লিখতে পারেন।
তাছাড়া ক্যানভা তে ডিজাইনকৃত নিজস্ব ডিজাইন ও বিক্রি করা যায়। আবার আপনি চাইলে অনলাইনে ক্যানভা দিয়ে কিভাবে ডিজাইন করতে হয় সে বিষয়ে ক্লাস করিয়ে ইনকাম করতে পারেন এবং সেই ক্লাসের ভিডিও ইউটিউবে টিউটোরিয়াল হিসেবে আপলোড করে সেখান থেকেও ইনকাম করতে পারেন।
তো আশা করছি আপনাদের কে ক্যানভা সম্পর্কিত সকল ধারণা এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে সমর্থ হয়েছি। এরপরেও যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন এবং এই পোস্ট টা কে দয়া করে ফেসবুকে আপনার ওয়ালে শেয়ার করে আপনার বন্ধু এবং শোভাকাঙ্ক্ষীদের জানতে সাহায্য করতে পারেন। ধন্যবাদ…!!!