বাংলা টাইফোগ্রাফি কিভাবে করা যায় এবং সাধারণ ধারনা - Bhairab IT Zone

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

“টাইপোগ্রাফি” শব্দটিকে আমরা খুব ভালো করেই জানি ক্যালিগ্রাফি নামে। টাইপোগ্রাফির যাত্রা টা অনেক পুরোনো কিংবা লম্বা হলেও বাংলায় ক্যালিগ্রাফির যাত্রা টা অতটাও দীর্ঘ নয়। কিন্তু তারপরও বাংলায় টাইপোগ্রাফির চাহিদা কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন ধরণের কলার মাধ্যমে একটা অক্ষরকে যে কতোটা নিপুণভাবে এবং কতগুলো দৃষ্টিনন্দন রুপে সাজানো যেতে পারে তারই প্রমাণ হলো বাংলা টাইপোগ্রাফি।  

বাংলা টাইপোগ্রাফি বা টাইপোগ্রাফি মূলত গ্রাফিক ডিজাইন এর একটি অংশ, বর্তমানে টাইপোগ্রাফির চাহিদা বাড়ার কারনে অনেক ডিজাইনাররাই বেশির ভাগ “টাইপোগ্রাফি” দিয়ে লগো ডিজাইনের কাজ করে থাকেন। সেটা হোক বাংলা কিংবা অন্য যেকোনো ধরণের ভাষা। তাই আপনিও বা বাদ থাকবেন কেন? যেহেতু টাইপোগ্রাফি করেও অনেক টাকা ইনকাম করা যায়, সেহেতু ইল্যুস্ট্রেটর এবং ফটোশপ এর কাজ শিখে এখনই নেমে পড়ুন টাইপোগ্রাফির মাধ্যমে আয় করতে।

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো ?

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগে?

টাইপোগ্রাফিতে ক্রিয়েটিভিটি

টাইপোগ্রাফি কিন্তু এতটাও কঠিন কিংবা আহামরি কিছু না, আবার অতটা সিম্পলও না। এটা পুরোটাই আপনার ক্রিয়েটিভিটি এবং নিত্য নতুন চিন্তা ধারার থেকে সৃষ্টি হওয়ার মতো একটি জিনিস। আপনি নিশ্চয় বাংলার সবগুলো বর্ণমালা চেনেন এবং বানান সম্পর্কেও পুরোপুরি ধারণা আছে? টাইপোগ্রাফি করতে কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। এর মাধ্যমে আপনি বড়জোর লিখালিখি করতে পারবেন কিন্তু টাইপোগ্রাফি করতে পারবেন না।

তার জন্য আপনাকে খাতা কলম নিয়ে প্রতিনিয়ত ডিজাইন করতে হবে, একটা অক্ষরকে কত কত ভাবে ঘুড়িয়ে পেচিয়ে লিখা যায় সেটা আবিষ্কার করতে হবে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে অক্ষরটা জেনে বুঝা যায়, আপনি যদি টাইপোগ্রাফি করতে গিয়ে অক্ষরের বোধগম্যতা হারিয়ে ফেলেন তাহলে কিন্তু এটাকে টাইপোগ্রাফি বলা যাবে না।

অক্ষরের স্পষ্টতা বজায় রেখে তার মধ্যে নানা রকম কালার, শ্যাডো, শেইপ, ফিল্টার ও ইফেক্ট দিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন একটা নাম, পোস্ট, ব্যানার কিংবা একটা লগো। 

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সার হতে চান?

টাইপোগ্রাফি করতে কি কি লাগে?

টাইপোগ্রাফি করার আগে ফটোশপ নাকি ইল্যুস্ট্রেটর কোন সফটওয়্যার দিয়ে করবেন সেটা আগে ঠিক করুন। তারপর সেটাকে আপনি আপনার ল্যাপটপ কিংবা পিসি তে ইন্সটল করুন। অতঃপর ইউটিউব দেখে উক্ত সফটওয়্যারের টুলসের ব্যবহার শিখে নিয়ে টাইপোগ্রাফি করা শুরু করতে পারেন।

টাইপোগ্রাফির ক্ষেত্রে কিন্তু ফন্টের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে। যেকোনো বাংলা ডিজাইনের ক্ষেত্রে বাংলা স্টাইলিশ ফন্টের গুরুত্ব অপরিসীম। ফন্টের দ্বারাই মূলত টাইপোগ্রাফি করা হয়, ফন্ট ছাড়া টাইপোগ্রাফির কোনো অস্তিত্ব নেই।

আমাদের বাংলাদেশে অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা প্রতিনিয়ত বাংলা ফন্ট তৈরি করে চলেছে, তাদের মধ্যে কিছু আছে ফ্রী এবং কিছু আছে প্রিমিয়াম। আপনি আপনার পছন্দ মতো সেখান থেকে ফন্ট ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।

নিচে আমি কিছু ওয়েবসাইটের লিংক দিয়ে দিচ্ছি যেখান থেকে আপনারা বাংলা ফন্ট ডাউনলোড করতে পারবেনঃ

(১)  লিপিঘর ডট কম   https://lipighor.com/

(২)  চিত্রলিপি ডট কম   https://chitrolipi.com/

(৩)  অক্ষর৫২ ডট কম   https://okkhor52.com/

(৪)  বেঙ্গলফন্টস ডট কম   https://www.bengalfonts.com/

(৫)  ফন্টবিডি ডট কম   https://fontbd.com/

(৬)  ওমিক্রনল্যাব ডট কম   https://www.omicronlab.com/bangla-fonts.html

(৭)   ফন্টলিপি   https://fontlipi.com/

উপরোক্ত ওয়েবসাইট গুলোতে আপনি হাই কোয়ালিটি সম্পন্ন স্টাইলিশ ফ্রী এবং প্রিমিয়াম ফন্ট পাবেন যা আপনি আপনার ইচ্ছা মতো বিনামূল্যে এবং টাকা দিয়ে কিনে ব্যবহার করতে পারবেন।

টাইপোগ্রাফি কিন্তু ডিজাইনেরই একটি অংশ। বাংলা স্টাইলিশ ফন্টে একমাত্র টাইপোগ্রাফির সঠিক ও পরিপূর্ণ ব্যবহারের দ্বারাই যেকোনো ডিজাইনকে একটি সুন্দর আউটলুক বা ভিন্ন মাত্রা দেওয়া যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এবং ক্রিয়েটিভিটি

টাইপোগ্রাফি ডিজাইনার হয়ে উঠবেন কিভাবে?

নতুন যেকোনো কিছুই প্রথম প্রথম কঠিন মনে হয়। অতঃপর ধীরে ধীরে সেটা মনোযোগ, চেষ্টা, পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে সহজ হয়ে যায়। টাইপোগ্রাফির ক্ষেত্রেও কিন্তু সেইম।

  • “আপনি কিন্তু ইউটিউব দেখে দেখেও টাইপোগ্রাফি শিখতে পারেন, তার জন্য আপনাকে কোনো কোর্স করতে হবে না। 
  • প্রথমে ইউটিউবে গিয়ে “টাইপোগ্রাফি কিভাবে করতে হয়” লিখে সার্চ দিলেই অসংখ্য ভিডিও টিউটোরিয়াল চলে আসবে। সেই ভিডিও দেখে দেখে প্র্যাকটিস করতে পারেন,
  • আবার আপনি গুগলে গিয়ে অন্যদের করা সেরা কিছু টাইপোগ্রাফি ডাউনলোড করে সেগুলোর মতো করে নিজে নিজে ডিজাইন করার চেষ্টা করতে পারেন,
  • খাতা কলম নিয়ে বসে নিত্য নতুন স্টাইলের বর্ণ ডিজাইন করে সেই অনুযায়ী টাইপোগ্রাফি করতে পারেন, টপিকের সাথে ডিজাইনের কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডের যেন সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন, 
  • ফন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একদম পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন, একাধিক ফন্টের ব্যবহারও করতে পারেন। তার সাথে লাইন, রেকটেংগুলার-সারকেল-ট্রায়াঙ্গাল এর মতো শেইপগুলোও ডিজাইনে ব্যবহার করতে পারেন,   
  • বাংলা বর্ণমালা নিয়ে বেশি বেশি স্টাডি করবেন, ইন্টারনেট থেকে খুঁজে খুঁজে সেরা টাইপোগ্রাফি গুলোকে বের করে সেগুলোকে স্টাডি করবেন,
  • প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিজাইন সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন, অক্ষরগুলো যেন বুঝতে বা পড়তে কোনো রকম অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অর্থাৎ কোনো রকম হিজিবিজি টাইপের ডিজাইন করবেন না যাতে ভিওয়ার্সরা কনফিউজ হয়ে যায়, 
  • আপনার ডিজাইনটি যেন সুন্দর সাবলীল ও আকর্ষণীয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন, যদিও প্রথম প্রথম সুন্দর হবে না, তারপরেও সপ্তাহে ৩০-৪০ টার মতো ডিজাইন করলে আসা করি ধীরে ধীরে উন্নতির পর্যায়ে যাবে,
  • টাইপোগ্রাফিকে বেশি গভীর ভাবে উপস্থাপন না করে সিম্পল ভাবে ডিজাইন করাই উত্তম, যাতে এক দেখাতেই বুঝা যায় যে কি লিখা আছে বা কি বুঝাতে চাচ্ছে”।

এভাবে কাজ করা চালিয়ে গেলে আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং আপনি খুব তাড়াতাড়ি টাইপোগ্রাফির সেক্টরে অভিজ্ঞ একজন ডিজাইনার হয়ে উঠবেন।

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ

টাইপোগ্রাফির আওতা

টাইপোগ্রাফির আওতা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে আধুনিক যুগে এর পরিধি গিয়ে দাঁড়িয়েছে আকাশ সীমানায়। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট পর্যন্ত টাইপোগ্রাফির ছোঁয়া দেখা যায়। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, লিংকডইন, ট্যুইটার সহ আরো অনেক ধরণের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও টাইপোগ্রাফির রেষ রয়ে গেছে, যেকোনো ধরণের ব্যানার ডিজাইনের কাজেও টাইপোগ্রাফির অবদান আছে, হোক সেটা ইসলামিক কোনো ওয়াজ মাহফিলের ব্যানার বা হিন্দুদের কীর্তন অথবা মঙ্গলযাত্রার ব্যানার, সব ক্ষেত্রে সব জায়গায়ই এখন টাইপোগ্রাফির রাজত্ব।

টাইপোগ্রাফির কিছু ধরণ আছে যেগুলোর সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই, অনেকেই একটার সাথে আরেকটা কে গুলিয়ে ফেলেন। তাই সেই সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো…

  • টাইপ ডিজাইনিংঃ টাইপ ডিজাইনিং হলো একেক রকমের ফন্ট ব্যবহার করে অক্ষর সাজানোর প্রকিয়া বা কাজ।
  • পোস্টার ডিজাইনিংঃ এক্ষেত্রে পোস্টার ডিজাইনিং বলতে মূলত সিনেমার পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন এবং হোল্ডিং বা বিলবোর্ড ডিজাইনের ক্ষেত্রে যে ফন্ট ব্যবহার করা হয় সেসব ডিজাইন বুঝানো হয়েছে।  
  • টাইটেল এনিমেশনঃ এটার কাজ হলো সিনেমার শুরুতে কিংবা শেষে সেই সিনেমার কলাকুশলীদের একের পর এক নাম দেখানোর প্রক্রিয়া। এটার মধ্যে বেশি ইফেক্ট দিতে হয় না, শুধু নরমাল ভাবে নাম গুলো লিখে দিলেই হয়ে যায় বাকিটা ভিডিও ইডিটরের কাজ। 
  • গ্রাফিটি আর্টঃ গ্রাফিটি একটি আর্ট। এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি নেই, এটার দ্বারা যেভাবে খুশি সেভাবে একটা অক্ষরকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে, দুমরে মোচরে লিখা হয়, এটা একটি পশ্চিমী আর্ট এবং এটাকে পপ কালচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
  • ক্যালিগ্রাফিঃ ক্যালিগ্রাফি অর্থ হলো অক্ষর চিত্র।প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানা গেছে যে, গ্রীসে এর ব্যবহার সর্বপ্রথম প্রচলিত হয় এরপর চীন এবং আরবীয় দেশে এর বিশেষভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়। এটার জন্য ব্যবহার করা হতো বিশেষ ধরণের রং তুলি এবং দোয়াত কলম। এই ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার এখনো সেই দেশগুলোতে চলমান আছে। 
  • লগো ডিজাইনিংঃ লগো কিংবা প্রতীক বানানোর ক্ষেত্রে টাইপোগ্রাফিকের ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে প্রায় সবাই ই লগো তৈরি এবং ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে টাইপোগ্রাফিকের উপর নির্ভরশীল।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?

টাইপোগ্রাফিকের দুনিয়ার যারা সফল

যারা এই টাইপোগ্রাফি করেই বিশ্বের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এবং পুরো বিশ্ব তাদের প্রতিভার জয়জয়কার করেছে এবং এখনো করছে তাদের কয়েকজনের নাম দেওয়া হলোঃ 

  • Martin Schmetzer  
  • Hand Made Font   
  • BMD Design   

উপরে উল্লেখিত যে তিনটা নাম দিলাম তারা সবাই প্রতিভাবান টাইপোগ্রাফার। প্রথমে যার নাম দেওয়া আছে তিনি হাতে এঁকে টাইপোগ্রাফি ডিজাইন করে থাকেন, তার সবগুলো ডিজাইনই অসাধারণ। তারপর যার নাম লিখলাম এটা একটা প্রতিষ্ঠানের নাম, এরা মূলত চকলেট সসের উপর ভিত্তি করে অনেক ধরণের ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের ফন্ট তৈরি করে থাকে। সবার শেষে যে নামটা আছে সেটাও একটা প্রতিষ্ঠানের নাম, এরা বিগত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ধরণের কাজ করে চলেছেন। তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে তারা কতোটা প্রফেশনাল এবং এক্সপার্ট। টাইপোগ্রাফিকের দুনিয়ায় আরোও অসংখ্য মানুষ আছে যারা সফলতা অর্জন করেছেন এবং ইতিহাস আমাদের অজানা।

টাইপোগ্রাফারের জন্য সহায়ক কিছু টুলস

যারা নতুন কিংবা এক্সপার্ট লেভেলের টাইপোগ্রাফার তাদের জন্য সহায়ক কিছু টুলসের নাম আমি গুগল থেকে খুঁজে বের করেছি যাতে আপনাদের সময় এবং পরিশ্রম বেঁচে যায় এবং এর ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্য নতুন ধারণা নিতে পারেন। টাইপোগ্রাফিতে এই টুলসগুলোর ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ডিজাইন আরোও সুন্দর এবং মার্জিত হবে। টুলসগুলো হলোঃ

  • typetester.org
  • fontstruct.com
  • fonttester.com

এই ছিলো আজকের “বাংলা টাইপোগ্রাফি কিভাবে করা যায়” সম্পর্কে আলোচনা, দিকনির্দেশনা এবং পরিবেশনা। আশা করছি আপনাদের বাংলা টাইপোগ্রাফি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পেরেছি, যদি আপনারা আমার ব্লগটি পড়ে এতোটুকুও উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলেই আমার লিখা এবং পরিশ্রম স্বার্থক।