ফ্রিল্যান্সিং এ একটি কাজকে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন ধরণের রুপদান করে সম্পন্ন করার নামই হলো ক্রিয়েটিভিটি। ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য যা যা প্রয়োজন এর মধ্যে ক্রিয়েটিভিটির গুরুত্ব অপরিসীম, কারন ক্রিয়েটিভিটিই হলো ফ্রিল্যান্সিং এর প্রধান বিষয়।
ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতার সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন। কারন সৃজনশীলতার কোনো শেষ নেই। কারো কারো ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতার বিকাশ জন্মগত ভাবেই প্রকাশ পেতে শুরু করে আবার কারো কারোরটা প্রতিভা, চর্চা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ক্রিয়েটিভিটি মূলত একটি মানসিক চিন্তাধারা যেটাকে ইতিবাচক চিন্তাশক্তি, অধ্যাবসায় এবং অধিক বিশ্লেষণিক ক্ষমতার ফলাফল বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না।
এই ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর জন্য যেমন চর্চা, অনুশীলন এবং অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন ঠিক তেমনি এই ক্রিয়েটিভিটির সঠিক ব্যবহার বা প্রয়োগ না করা হলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক।
নিম্নে ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হওয়ার কারণ এবং ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
আরো পড়ুনঃ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?
ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হওয়ার কারনসমূহ
- কাজে মনযোগ না থাকা – কাজে মনযোগ না থাকলে ক্রিয়েটিভিটি তৈরি হয় না, কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই তাতে মনযোগ থাকতে হবে।
- ঘুমের অনিয়ম – ঠিকমতো না ঘুমালে ব্রেইন ঠিকভাবে কাজ করে না, বারবার ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টির ফলে অনেক মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে যা ক্রিয়েটিভিটির অন্তরায়।
- দ্বিধাদ্বন্ধে ভোগা – কোনো কাজ করার সময় অনেক ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরপাক করার কারনেও ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হতে পারে। যেমনঃ কাজটি ভালো মতো হচ্ছে তো, ক্লাইন্টের পছন্দ হবে তো, ক্লাইন্টের যদি পছন্দ না হয়, ক্লাইন্ট যদি পে না করে, ইত্যাদি।
- অতিরিক্ত কাজের চাপ – ক্লাইন্টরা সবসময় চাইবে কাজটি তারাতারি করিয়ে নিতে কিন্তু আপনাকে ডেডলাইনের কথা মনে রাখতে হবে। যে কাজ আপনি ৩ দিনে শেষ করতে পারবেন সেই কাজের জন্য আপনি ৫ দিন সময় নিবেন যাতে আপনার উপর কাজের প্রেশার না পরে, অন্যথায় তাড়াহুড়ো করে কাজ কমপ্লিট করতে গেলে আপনার ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হতে পারে।
- কাজে সফল না হওয়ার ভয় – অনেকেই দ্রুত টাকা ইনকামের জন্য তাড়াহুড়ো করে কাজ করেন, এতে তো তার কাজ ঠিকমতো হয় ই না উল্টো আরো ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হয়, যার ফলে পেমেন্টের সময় সমস্যা হয়। ফলে ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে সফল না হওয়ার ভয় ঢুকে যায়।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এ কোন ধরণের কাজ করবেন?
ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর উপায়সমূহ
- খাবারে নিয়মানুবর্তিতা – অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত খাবার খাওয়ার ফলে মানসিক এবং শারীরিক সুস্থ্যতা বজায় থাকে যার ফলে ক্রিয়েটিভিটি বৃদ্ধি পায়।
- প্রকৃতি থেকে জ্ঞান অর্জন – জ্ঞানের প্রধান উৎসই হলো প্রকৃতি। বিশ্বে যত মনি-ঋষি এবং কবিগণ রয়েছে তারা সবাই প্রকৃতির পূজারী ছিলেন। তারা সবাই ই প্রকৃতির সাধারণ বিষয়ের মধ্যে অসাধারণ কিছু দেখতে পারতেন। সেই দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করুন।
- দৈনন্দিনের ঘটনা থেকে – আপনার চারিদিকে কি কি ঘটছে তা লক্ষ্য করুন। তা থেকে নতুন নতুন আইডিয়া পেতে পারেন, যেমনঃ বই পড়ে যে কোন বিষয়ে একটা আইডিয়া পেয়ে যেতে পারেন, টিভি দেখার সময় কিংবা পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে নতুন নতুন আইডিয়ার উদ্ভাবন হতে পারে।
- আইডিয়া লিখে রাখুন – আমাদের প্রত্যেকের মাথায়ই সবসময় কিছু না কিছু ঘুরতে থাকে, এগুলো হয় মূলত চিন্তাভাবনা বা ইন্দ্রীয় সঞ্চালনের মাধ্যমে। তাই যখনই কোনো আইডিয়া পেয়ে যাবেন তখনই সেটা নোট করে রাখবেন যাতে পড়ে ভুলে না যান।
- গান শুনুন – বেশিরভাগ চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই গান শুনতে পছন্দ করেন, ফ্রিল্যান্সাররাও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেকেই তাদের পছন্দের গান শুনতে শুনতে মস্তিষ্কের মাধ্যমে সেই দৃশ্য কল্পনা করে থাকেন, যার মাধ্যমে নতুন নতুন ধারনা বা আইডিয়া পেয়ে যান।
অর্থাৎ, ধারণা এবং দক্ষতার সংমিশ্রণের দ্বারাই তৈরি হয় ক্রিয়েটিভিটি। এই ক্রিয়েটিভিটি ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং করার কথা চিন্তাও করা যায় না, কারন ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কোনো না কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে বা সেই বিষয়ে পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।