বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য। এই তথ্যকে অনেকে অনেক রকমভাবে ব্যবহার করে। কেউ এর সঠিক ব্যবহার করে তো কেউ এর অপব্যবহার করে। আমরা যখন কোনো কিছু নিয়ে কনফিউজড থাকি বা কিছু জানতে কিউরাস ফিল করি, তখনি গুগলে গিয়ে সেটা সার্চ ইঞ্জিনে লিখে সার্চ দেই। গুগলের সব তথ্যই যে সঠিক তা কিন্তু নয়, সঠিক তথ্য চেনার কৌশলই হলো সেই তথ্যের এস ই ও।
সার্চ ইঞ্জিন তাদের র্যাংকিং এলগোরিদমে অনেকটা বদল করার ফলে এখন আর যেকোনো কীওয়ার্ডকে আগের মতো সহজে র্যাংক করানো যায় না, ফলে র্যাংকিং এর জন্য অনেকটা কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। সেই প্রক্রিয়াকে মাথায় রেখে এস ই ও – এর কৌশল ও পদ্ধতি সমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা – ১। হুয়াইট হ্যাট এসইও ২। ব্ল্যাক হ্যাট এসইও।
হুয়াইট হ্যাট এসিইও কি?
হুয়াইট হ্যাট এসইও হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের সেই সব পদ্ধতি যা সার্চ ইঞ্জিনের সব রকম নিয়ম নীতি মেনে চলার মাধ্যমে তার কাজ সম্পন্ন করে। এই ভাবে কাজ চালিয়ে গেলে আপনি খুব তারাতারি আপনার যেকোনো কীওয়ার্ডকে র্যাংকিং এ এগিয়ে নিতে পারবেন এবং ট্রাফিক ও ভিজিটরের পরিমাণও বাড়াতে পারবেন। হুয়াইট হ্যাট এসইওকে সব সময় ভালো কাজের একটি ডিজাইন হিসেবে রিকমান্ড করা হয়।
হুয়াইট হ্যাট এসইওর যে গুনগুলো থাকা উচিতঃ
একটি এসইও কে হুয়াইট হ্যাট এসইও বলে বিবেচনা করতে হলে যে গুনাবলি থাকা প্রয়োজন সেগুলো নিম্নরুপঃ
- সার্চ ইঞ্জিনের দিক নির্দেশনাগুলো মেনে চলা।
- কোনো রকম ধোঁকাবাজি বা প্রতারণামূলক কাজের সাথে জড়িত না থাকা।
- সার্চ ইঞ্জিন যেগুলো ইন্ডেক্সিং এর মাধ্যমে যে কনটেন্টকে র্যাংক করানো হয়, সেগুলো যেন পরবর্তীতে যেকোনো ইউজার সেই কনটেন্টকেই দেখতে পায়।
- ওয়েব পেইজের কনটেন্টসমূহ যেন শুধু সার্চ ইঞ্জিনের জন্য তৈরি না করে ইউজার বা ব্যবহারকারীর জন্য তৈরি করা হয়।
- এটি যেন ওয়েব পেইজের কনটেন্টসমূহকে কোয়ালিটি সম্পন্ন করে এবং ওয়েব পেইজের জন্য উপকারী কিছু কনটেন্টকে সহজলভ্য করে।
হুয়াইট হ্যাট এসইও সব সময় চেষ্টা করে ইউজারদের সঠিক ও উন্নত মানের রেজাল্ট দিতে। কোনো রকম ধোঁকা বা প্রতারণার মাধ্যমে সাইট ভিজিটরদের বোকা বানানো হুয়াইট হ্যাট এসইওর নীতির মধ্যে পড়ে না।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কি?
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের নিয়ম নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তার কাজ তারাতারি সম্পন্ন করার জন্য কৃত্রিমভাবে ব্যাকলিংক বিল্ড করে। এতে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো ব্যাকলিংক তৈরি করা যায়। আর এই বেশি লিংক তৈরি করে তাদের কীওয়ার্ডকে র্যাংক করানোর জন্য অনেকেই ব্ল্যাক হ্যাট এসইও করে থাকেন। এটাকে অনেকে আবার স্প্যামডেক্সিং ও বলে থাকেন।
কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন এখন অনেক উন্নত হওয়ায় এইসব ব্যাকলিংকের ফুটপ্রিন্টগুলো ধরে ফেলতে পারে, যদি একবার ধরে ফেলে তাহলে পুরো ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়। কারণ সার্চ ইঞ্জিন কখনোই এসব স্প্যামডেক্সিং কে অনুমোদন করে না এবং সব সময় এগুলোকে সার্চ ইঞ্জিন থেকে কমানোর চেষ্টা করে। অতঃপর সেই ওয়েবসাইটকে পুনরায় সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিং এ আনা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়ায়, অনেক ক্ষেত্রে তা অসম্ভবও হয়ে দাঁড়ায়।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইওর যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকেঃ
যে লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন যে এটা ব্ল্যাক হ্যাট এসইও সেই বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরুপঃ
- সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা অস্বীকৃত এমন কিছু র্যাংকিং করা যা ধোঁকা\প্রতারণার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।
- ইউজারদের এমন একটি ওয়েব পেইজে রিডিরেক্ট করে নিয়ে যাওয়া যেটা সার্চ ইঞ্জিনের ওয়েব পেইজের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বা ভিন্ন।
- দুটি ভার্সন তৈরি করে উপস্থাপন করা, যেগুলোর একটি হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন স্পাইডার বা গুগলবোটসের জন্য এবং আরেকটি ভার্সন হচ্ছে হিউম্যান ভিজিটরদের জন্য। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে ‘ক্লকিং এসইও কৌশল’ (Cloaking SEO Strategy) বলা হয়।
- একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের হুবুহু কপি তৈরি করা যেটা আসল ওয়েবসাইটের মতো ক্রলিং কনটেন্টস গুলো উপস্থাপন করে, কিন্তু তথ্যের দিক দিয়ে ইউজারদের আনরিলেটেড ওয়েব পেইজ বা ওয়েবসাইটগুলোতে রিডিরেক্ট করে নিয়ে যায়। যেটাকে ওয়েব পেইজ হাইজ্যাকিং বলে।
- একসাথে একাধিক ওয়েবসাইট গুলোকে হোস্ট করার মাধ্যমে সব গুলো ওয়েবসাইটকে মিরোর করে এবং সেই সাথে বিষয়বস্তু বা ধারণাগতভাবে সামঞ্জস্য রাখে, কিন্তু আলাদা আলাদা URL ব্যবহার করে।
- লো-কোয়ালিটি সম্পন্ন ওয়েব পেইজ তৈরি করা যেগুলোতে কম কনটেন্টসমূহ উপস্থিত থাকে কিন্তু এর পরিবর্তে সেইম কীওয়ার্ড এবং সেইম ফ্রেইজ ব্যবহার করে স্টাফড করা হয়। এটাকে বলা হয় ডোরওয়ে বা গেইটওয়ে পেইজ।
- মেটা ট্যাগে কীওয়ার্ডগুলোর পুনরাবৃত্তি করা এবং ওয়েবসাইটের কনটেন্টগুলোর সাথে রিলেটেড নয় এমন কীওয়ার্ড ব্যবহার করা, যেগুলোকে মেটা ট্যাগ স্টাফিং বলে।
- কোনো ওয়েবপেইজের ব্যাকগ্রাউন্ড কালারের সাথে হিডেন, ইনভিজিবল বা ছোট আকারের ফন্ট টেক্সট কিংবা HTML কোড লুকানো থাকলে। যেমন “No – Frame” সেকশন।
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটকে র্যাংকিং এ দ্রুত উন্নত করতে চান তাহলে উপরোক্ত ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কৌশল গুলো থেকে দূরে থাকুন। কারণ সার্চ ইঞ্জিন এখন এইসব স্প্যামডেক্সিং ধরে ফেলতে যথেষ্ট স্মার্ট হয়ে গেছে। অন্যথায় আপনার ‘আমও যাবে ছালাও যাবে’।