ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স শিখে আপনি ফেসবুকের মতো বিশাল বড় এই প্ল্যাটফর্মে খুব তাড়াতাড়িই নিজের একটা আয়ের মাধ্যম তৈরি করে ফেলতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এই ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স। সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বলতে গেলে সবচেয়ে বড় অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বলতে আমরা ফেসবুককেই বুঝি।
কারণ প্রত্যেক মাসে গড়ে বিশ্বের ২.৯৬ বিলিয়ন মানুষ সক্রিয়ভাবে Facebook এবং ১.৩ বিলিয়ন মানুষ Facebook Messenger ব্যবহার করে থাকে। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন আপনার ব্যবসার প্রচারের জন্য কতবড় একটা প্ল্যাটফর্ম আপনি একদম ফ্রিতে পেয়ে যাচ্ছেন।
আমরা অনেকেই ফেসবুকের অসংখ্য ফিচার এবং টুলস সম্পর্কে জানি না, কিংবা জানলেও কিভাবে কোনটা ব্যবহার করতে হয় সেটা জানি না। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আমরা যদি সেই টুলসের ব্যবহারগুলো শিখে ফেলি তাহলে খুব সহজেই আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ কিংবা ই-কমার্স সাইটের বিক্রি বহুগুনে বৃদ্ধি করতে পারবো।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এ কোন ধরণের কাজ করবেন?
কেন ফেসবুক মার্কেটিং শিখবেন?
আমরা সাধারণত ফেসবুকের যে ইন্টারফেসটা দেখে থাকি সেটা হলো ফেসবুকের মাত্র ২০ ভাগ। বাকি ৮০ ভাগ রয়েছে ফেসবুকের বিভিন্ন সাব ডোমেইনে। আমাদের দেশের বলতে গেলে কেউই ফেসবুকের ৯৯ ভাগ ব্যবহার করতে পারে না। সাধারণ যত আম জনতা আছে তারা যতটুকু ব্যবহার করে সেটাকে ৫ ভাগের বেশি বলা যায় না। আর স্প্যামাররা বড়জোড় ১০ ভাগ ব্যবহার করতে পারে। তো ফেসবুকের সর্বোচ্চ টা ব্যবহার করার মাধ্যমে কিভাবে ফেসবুক থেকে আয় করবেন সেই সম্পর্কেই আজকে আলোচনা করবো।
ফেসবুক গত ২০১৯ সালে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ব্লগার, পাবলিশার এবং ডেভেলপারদের যাবতীয় খরচ দেওয়ার পর বাদ বাকি ৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল শুধুমাত্র ফেসবুক অ্যাড থেকেই। যেটা এখন পর্যন্ত দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেসবুকে যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে এবং ভিডিও বানায় তাদেরকে ফেসবুক যে অর্থ প্রদান করে সেটাও যদি গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১ বিলিয়ন ডলার।
একবারও কি ভেবে দেখেছেন ফেসবুক কেন তাদেরকে এতো টাকা দেয়? কারণ হলো প্রচারণা। এই প্রচারণার ফলেই ব্যবসায়ের প্রসার ঘটে। ঐ যে কথায় আছে না – “প্রচারেই প্রসার”! এই ফেসবুক প্রচারণা তথা মার্কেটিং এর প্রদান লক্ষ্যই হলো সেল বাড়ানো। সেল যতো বেশি হবে, মুনাফা ততো বেশি হবে। এ জন্যেই এখন প্রত্যেকটা কোম্পানিই তাদের ব্যবসায়ের প্রচারণা এবং সেল বাড়ানোর জন্য নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ম্যানাজার নিয়োগ করে থাকে।
একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ম্যানাজারের বেতন প্রায় ৫০০ থেকে ৩,০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অর্থাৎ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসা করার পাশাপাশি চাকুরী করার রাস্তাটাও সুগম করে দিয়েছে ফেসবুক।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং- এ দক্ষ হওয়ার জন্য কি কি করবেন?
ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার?
ফেসবুকের ফিচার এবং টুলসের ব্যবহার জানতে হলে আপনাকে ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স করতে হবে। ফেসবুক মার্কেটিং সাধারনত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, যথা – ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং এবং পেইড ফেসবুক মার্কেটিং। এক্ষেত্রে আপনি দুই ধরণের কোর্সই করতে পারবেন। ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী ফেসবুক ফ্রি এবং পেইড মার্কেটিং এর ব্যবহার করা হয় থাকে।
ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং
ফেসবুকে যেসব মার্কেটিং বা প্রচারণার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না তাকে ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং বলে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক – “আপনি নিজের বিজনেসের জন্য একটি ফেসবুক পেজ খুললেন, তারপর আপনার কাজের ধরণ অনুযায়ী একটা সুন্দর নাম দিলেন। অতঃপর প্রতিদিন আপনার পন্য সম্পর্কে পোস্ট দিতে থাকলেন, সেই সাথে আপনার আপনজন এবং ফ্রেন্ডসদের কে আপনার পেজ লাইক দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।
তাদেরকে আপনার পেজকে শেয়ার দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করলেন। তারা যেন আপনার পাশে সব সময় থাকে এবং লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করে আপনার পেজকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে তার জন্য তাদের একটু তোষামোদি করলেন, ইত্যাদি ইত্যাদি”। এগুলো করতে কিন্তু কোনো পয়সা খরচ করতে হয় না। এটাকেই বলে ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগে ?
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং
ফেসবুকে আমরা কোনো পোস্টের নিচে ছোট্ট করে যে (Sponsored) লিখা দেখতে পাই সেই পোস্টগুলোকেই বলে পেইড ফেসবুক মার্কেটিং। প্রত্যেকটা কোম্পানিই চায় তাদের পন্য সম্পর্কে সকলেই অবগত থাকুক। তাই তারা ফ্রি ফেসবুক প্রমোশন ব্যবহারের পাশাপাশি অর্থ খরচ করে পেইড ফেসবুক মার্কেটিংও ব্যবহার করে থাকে।
এই পেইড ফেসবুক মার্কেটিং ব্যবহারের মাধ্যমে একদম সিলেক্টিভ গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। যেমন ধরুন, “আপনি চাচ্ছেন আপনার প্রোডাক্টের কাস্টমার ঢাকা বনানী এলাকার মধ্যে অবস্থান করবে এবং নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই হবে, আবার আপনি চাইলে একটা বয়সের সীমাও দিয়ে দিতে পারবেন যে এত থেকে এত বছর বয়সী লোকগুলো আমার বিজ্ঞাপন বা পোস্ট দেখবে”।
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে যে সুবিধা আপনি ভোগ করতে পারবেন সেটা ফ্রিয়ের ক্ষেত্রে পাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এই জন্যেই পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। কারণ এতে আপনার পরিশ্রম কমে যাবে এবং খুব দ্রুতই আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্রেতাদের খুঁজে পাবেন।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?
ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং কোর্সসমূহ
- ফেসবুক বেসিক ফ্রি মার্কেটিং কোর্স। প্ল্যাটফর্ম লিংক – [ফেসবুক বিজনেস] (https://www.facebook.com/business/learn#)
- ফেসবুক ফ্রি মার্কেটিং উইথ সার্টিফিকেট। প্ল্যাটফর্ম লিংক – [ফেসবুক বিজনেস] (https://www.facebook.com/business/learn/certification)
- এডভান্সড ফেসবুক মার্কেটিং ফ্রি কোর্স। প্ল্যাটফর্ম লিংক – [ফেসবুক ব্লুপ্রিন্ট] (https://www.facebookblueprint.com/student/catalog)
- ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স – অর্গানিক এন্ড পেইড স্ট্র্যাটেজি। প্ল্যাটফর্ম লিংক – [হাবস্পট] (https://academy.hubspot.com/courses/facebook-marketing-training)
- ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স। প্ল্যাটফর্ম লিংক – [ইউডেমি] (https://www.udemy.com/topic/facebook-marketing/?lang=en&price=price-free&sort=popularity&subcategory=Social+Media+Marketing)
- ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স। প্ল্যাটফর্ম লিংক – [ইউটিউব] (https://www.youtube.com/playlist?list=PLdohJ-1LbCYPWHLDzOCWieIW6GAllqYX5)
এই কোর্সগুলো থেকে যা যা শিখবেন তা হলো – কিভাবে একটা পারফেক্ট ফেসবুক পেজ তৈরি করবেন এবং তাতে অ্যাড দিবেন তার সম্পূর্ণ গাইডলাইন, কিভাবে পোস্ট দিবেন এবং কখন দিবেন তার নিয়মাবলি, কিভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করবেন এবং নিয়ন্ত্রণ করবেন তার নির্দেশনাবলিসহ আরোও অনেক কিছু।
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং কোর্সসমূহ
- ফেসবুক মার্কেটিং। প্ল্যাটফর্ম – [টেন মিনিট স্কুল] (https://10minuteschool.com/skills/courses/40/facebook-marketing/)
- মেক মানি উইথ ফেসবুক মার্কেটিং। প্ল্যাটফর্ম – [রেপটু ডট কম বিডি] (https://repto.com.bd/course/make-money-with-facebook-marketing-by-lajukhasan2018)
- কোচিং সেন্টার। প্ল্যাটফর্ম – [এলাকার জনপ্রিয় বা নিজস্ব পরিচিত কোনো প্রতিষ্ঠান]
এই কোর্সগুলো থেকে যা যা শিখবেন তা হলো – কিভাবে ফেসবুকে নিজের ব্যবসা বাড়ানো যায়, কিভাবে পোস্টে অ্যাড লাগানো যায়, কিভাবে ফেসবুক থেকে প্রতিদিন ইনকাম করা যায়, কিভাবে ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজ থেকে আয় করা যায়, কিভাবে ফেসবুকের পোস্টে রিচ বাড়ানো যায়, কিভাবে ফেসবুকের লাইক-কমেন্ট-শেয়ার ও ভিউস বাড়ানো যায় সহ আরোও অসংখ্য পদ্ধতি শিখতে পারবেন।
শেষ কথা
এই ছিলো ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আপনারা চাইলেই নিজেরদের অবসর সময়ে এই কোর্স গুলো করে রাখতে পারেন। আমার মতে আপনারা পেইড ফেসবুক মার্কেটিং কোর্সগুলো করে যা শিখবেন, ফ্রি মার্কেটিং কোর্সগুলো তেও তা ই শিখবেন। তাই বিনামূল্যের কোর্সগুলো করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আমি করি। হ্যাঁ, কিছু কিছু ফ্রি কোর্সের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের জন্য আপনাকে হয়তো টাকা দিতে হতে পারে, তবে সার্টিফিকেট ছাড়াও আপনি কোর্স সম্পন্ন করে কাজ করা চালিয়ে যেতে পারবেন।